হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুরু হলো সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থায়

প্রকাশকালঃ ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০১:০৬ অপরাহ্ণ ২৩৯ বার পঠিত
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব  শুরু হলো  সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থায়

শুরু হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবারের মতো এবারও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল অপতৎপরতা চালাতে পারে বিষয়টি মাথায় রেখেই এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে বাড়তি তৎপরতার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূজার প্রথম দিন শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে বিসর্জন মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পর্যন্ত পাঁচদিন দেশজুড়ে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ মন্দির বিবেচনায় তালিকা করে প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। এছাড়া, প্রতিটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন, টহলে থাকবে র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা। 

এর আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে পৃথক পৃথকভাবে মতবিনিময় সভা করেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান, পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম, কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা, শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাজিবুল ইসলাম, মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন, রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা, ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ আফরোজ, মাদারীপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচএম সালাহ উদ্দিন, রাজৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন, কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমুল হাসান, শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুব্রত গোলদার, ডাসার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হাসানুজ্জামান।


মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ভাস্কর সাহা বলেন, ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ ধর্মীয় উৎসবে যে কোনো সংঘাত এড়াতে প্রতিটি পূজা মণ্ডপ থাকবে কঠোর নজরদারিতে। এ বছর আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে মাদারীপুর জেলায় ৪৬০টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে শিবচরে ৬০টি, কালকিনিতে ২১টি, ডাসারে ৪১টি,  মাদারীপুর সদরে ৭৫টি, রাজৈরে ২৬৩টি।

মাদারীপুর স্থানীয় সরকার বিভাগ এর উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব মোঃ নজরুল ইসলাম আবহমান বাঙালীর অন্যতম বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই উৎসব উদযাপনের সর্বোচ্চ আকাঙ্খা  বাস্তবায়নকল্পে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সমগ্র মাদারীপুরের স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ একযোগে কাজ করছেন। ঐতিহ্যগত সম্প্রীতি ও উৎসব উদযাপনে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং গ্রামপুলিশ গণ নিরলস ভূমিকা পালন করছেন। তিনি সকলের সর্বোত্তম মঙ্গল প্রত্যাশা করেন।


মাদারীপুর আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট ফারজানা রহমান বলেন, জননিরাপত্তায় বাংলাদেশ আনসার সদা তৎপর ও সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনে প্রস্তুত। মাদারীপুর জেলায় আনসার ও ভিডিপি সদস্য পুরুষ ও মহিলারা ২৯০৬ জন ডিউটি পালন করছে । অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজা মণ্ডপে ৮ জন, সাধারণ পূজা মণ্ডপে ৬ জন , গুরুত্বপূর্ণ পূজা মণ্ডপে ৬ জন করে ডিউটি পালন করছে ।


র‌্যাব-৮ সিপিসি-৩ মাদারীপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মো. মুহতাসিম রসুল বলেন, ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আর এ উৎসবকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে পালন করার লক্ষ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৮)। র‌্যাব-৮ এর সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপসহ সব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ আট জেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‍্যাব। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র‍্যাবও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করবে। পূজাকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ বাড়ানো হয়েছে র‍্যাবের তৎপরতা ও নজরদারি। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়ানোর লক্ষ্যে র‍্যাব-৮ সার্বিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পূজামণ্ডপকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিনিয়ত র‍্যাবের পেট্রোলিং ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি চলমান থাকবে। এছাড়া বাড়তি 

নজরদারিসহ প্রস্তুত থাকবে র‍্যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স। পূজাস্থলে নিয়োজিত অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে র‌্যাবের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। যদি এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তা নিরসনে র‍্যাব সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।


পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম জানিয়েছেন, হিন্দু - মুসলিম সহ অপরাপর সকল ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর চমৎকার মেলবন্ধনের এই মাদারীপুর জেলার পুলিশ বাহিনী তার দায়িত্ব পালনে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করবে। জননিরাপত্তায় কোন চুল পরিমাণ ছাড় দিবেনা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। 

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মারুফুর রশীদ খান বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আন্তরিক পরম্পরা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যের এক অনন্য ঐতিহ্য ধারণ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মাদারীপুর জেলার রয়েছে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক গৌরবময় মেলবন্ধন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন,  জেলা পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, RAB (রেপিড একশান ব্যাটালিয়ন), গ্রাম পুলিশ সহ যৌথ উদ্যোগে নিশ্ছিদ্র ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি সহযোগে নিরাপত্তা বলয়ে সাড়ম্বরে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। 

"ধর্ম যার যার, উৎসব সবার " এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক  মারুফুর রশীদ খান সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ মাদারীপুরের সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। শারদীয় দুর্গাপূজায় সরকারি সহায়তাসহ, সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিসহ সপ্তাহব্যাপী পূজা উদযাপনে সমগ্র মাদারীপুরবাসীর পুর্ণ নিরাপত্তার বিষয়ে জেলা প্রশাসন অঙ্গীকারবদ্ধ বলে অভিমত প্রদান করেন সম্মানিত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান।