ভাঙার সংস্কৃতি পরিহার করে গড়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এই মতামত প্রকাশ করেন।
তিনি লিখেছেন, "আমাদের কি গড়ার সামর্থ্য নেই? আমরা নিছক কিছু মূর্তি বা দালান ভাঙার পরিবর্তে বৃহত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি—আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদ। তাই আমাদের উচিত শত্রুর শক্তির বিপরীতে পাল্টা চিন্তা, শক্তি ও আধিপত্য গড়ে তোলা।"
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আরও উল্লেখ করেন, "লীগ বা হাসিনা কোনো স্বতন্ত্র বিষয় নয়; বরং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদেরই সম্প্রসারণ। আধিপত্যবাদ নিজেদের শক্তিশালী করছে বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রকল্পনা, দক্ষ মানবসম্পদ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশের মাধ্যমে। আমাদের পাল্টা শক্তিও এই তিনটি ভিত্তির ওপর গড়ে তুলতে হবে।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "ভাঙার পর গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্তকাল ধরে ভাঙার প্রকল্প আমাদের ভবিষ্যতের জন্য শুভ হতে পারে না। গড়ার প্রকল্প দ্রুত শুরু ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। তাই সবাই গঠনে সক্রিয় হোন।"
তিনি আরও জানান, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুত শুরু হবে। আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং এ মাসের মধ্যেই তা আরও গতি পাবে।
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ নিছক ধ্বংস নয়, বরং বিকল্প ব্যবস্থা গড়ার লড়াই উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা নতুন বন্দোবস্তে ভাঙার চেয়ে গড়ার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।"
তিনি সতর্ক করেন, "খুনি হাসিনার বক্তব্য প্রচার এবং এর প্রতিক্রিয়াজনিত অস্থিরতার জন্য দায়ী থাকবে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ। তাই আমাদের উচিত প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ার বদলে সৃজনশীল শক্তির বিকাশ ঘটানো ও কৌশলগত পরিকল্পনা নেওয়া। কারণ, এই লড়াই মাত্র শুরু হলো এবং এটি মীমাংসিত হতে অন্তত এক দশক সময় লাগবে। আমাদের প্রস্তুতি এখনো অপর্যাপ্ত।"
মাহফুজ আলম আরও বলেন, "রাগ, ক্ষোভ ও ঘৃণা নেতিবাচক শক্তি, তবে অভ্যুত্থানের পর এগুলো ইতিবাচকভাবে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সেই সুযোগ এখনো শেষ হয়নি। আগামী এক দশকের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ও আধিপত্যবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে আমাদের সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।"
তিনি ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "ইতিহাস আমাদের সুযোগ দিয়েছে, এবার আমাদের জয়ী হতেই হবে। আর জয়ের একমাত্র পথ হলো—বাস্তবসম্মত রাষ্ট্রকল্পনা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং দক্ষ ও মর্যাদাবান মানবসম্পদ গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের দূরদৃষ্টি দিন।"