|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ৩১ মে ২০২৩ ০৬:৪০ অপরাহ্ণ

বস্ত্র খাতে উৎপাদন জ্বালানি সংকটে নেমেছে অর্ধেকে


বস্ত্র খাতে উৎপাদন জ্বালানি সংকটে নেমেছে অর্ধেকে


লমান গ্যাস ও বিদ্যুত্সংকটের কারণে টেক্সটাইল খাতে উৎপাদন সক্ষমতা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় টেক্সটাইল শিল্প ক্রমাগত লোকসানে পড়ছে। এতে করে উদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন। জ্বালানির পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন খাতটির সংকট আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরো অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার টেক্সটাইল খাতের বিরাজমান সমস্যা ও উত্তরণ সংশ্লিষ্ট এক সংবাদ সম্মেলনে খাতের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

তিনি বলেন, টেক্সটাইল খাতে বর্তমান বিনিয়োগ ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ চলতি মূলধনসহ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। মিলগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানের কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক শিল্প ইতিমধ্যে রুগ্ন হয়ে পড়েছে ও পড়ার উপক্রম হয়েছে।


এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে সুতা বিক্রিতে সুরক্ষা দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, পোশাকশিল্পে কাপড় তৈরির জন্য ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে কটন সুতা সংগ্রহের একটি অংশ দেশীয় বস্ত্রকল থেকে করার বিধান করা হোক।

সুতা বিক্রিতে সুরক্ষা চাওয়ার কারণ হিসেবে মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্ডেডওয়্যার হাউজের আওতায় আমদানি করা সুতা, কাপড় ও পোশাকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। ফলে সুতার মজুত বেড়ে যাওয়ায় বস্ত্রকলগুলোর আর্থিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কয়েকটি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আরো মিল বন্ধ হওয়ার পথে।


সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি বন্ডেড সুবিধায় আমদানি করা সুতা, কাপড় ও পোশাকের অবৈধ বিক্রি বন্ধে বাবুরহাট, নরসিংদী, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সুবিধা অব্যাহত রাখা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত এবং ব্যাংকঋণের কিস্তি ও সুদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ব্লক হিসেবে রাখার পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে সহজ কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা দাবি করেন।

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ছোট ও মাঝারি মানের ফেব্রিক মিলগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, পলাশ, কালিবাড়ী, মাধবদী ইত্যাদি এলাকায় অনেক ছোটখাটো মিল রয়েছে। এসব এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা মূলত তাঁতনির্ভর এবং মিলগুলো পরিচালিত হয় সাধারণত বিদ্যুৎ দিয়ে। ফলে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে মিলগুলোর যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করার কোনো বিকল্প নেই।

বিটিএমএ  প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি গভীর চক্রান্তের সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে ঘরে ঘরে পাকিস্তানি কাপড়ে ভরে গেছে। সরকার ২০৩০ সালে টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে খাতটির এই নাজুক অবস্থা দীর্ঘদিন থাকলে সরকারের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি। 


বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, আশা করেছিলাম করোনা-পরবর্তী সময়ের পর থেকে আমাদের মিলগুলো ঈদুল ফিতরের বাজারটি পাবে। তবে তীব্র ডলার-সংকটের পরেও ঈদুল ফিতরসহ সব সময়ে বন্ডেডওয়্যার হাউজের মাধ্যমে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের আমদানি করা বিদেশি সুতা শহরের বড় শপিংমলগুলোতে অবাধে বিক্রি করছে। এতে স্থানীয় মিলগুলোর অবস্থা সংকটের মধ্যে পড়েছে ।

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, পাকিস্তান ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন থেকে আসা সুতা-কাপড়সহ বিভিন্ন ড্রেস-ম্যাটেরিয়েল বিভিন্ন নগরীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার ইসলামপুরের বিক্রমপুর প্লাজাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এগুলো ব্যাপকভাবে বিক্রয় হচ্ছে। আমরা জানি না সরকার এর মাধ্যমে কি পরিমাণ রাজস্ব পেয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় এর ফলে দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতে বিদ্যমান ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি আজ অস্তিত্বসংকটের মধ্যে রয়েছে।


মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, দেশের স্পিনিং মিলগুলোর গত ১৫ মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। উত্পাদিত সুতা কম দামে বিক্রি এবং অতিরিক্ত গ্যাস বিল পরিশোধের কারণে এ ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মিলগুলোকে।

খোরশেদ আলম নামে এক উদ্যোক্তা সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। তার ৩৭ বছরের শিল্পজীবনে এমন গ্যাসের সংকট তিনি দেখেননি। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না, এ কারণে তার একটি ইউনিট বন্ধ, অন্য ইউনিটের ৩৫ শতাংশ কাজ চলছে। বিদ্যুতের সমস্যাও ভয়াবহ।

রাজধানীর পান্থপথে বিটিএমএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সহসভাপতি ফজলুল হক, পরিচালক সৈয়দ নূরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ জুবায়ের, খোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫