প্রকাশকালঃ
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:৪২ অপরাহ্ণ ২০৫ বার পঠিত
ব্যাংকমালিকেরা সভায় জানান, ডলারের দাম কিছুটা বাড়ালে সংকট কমতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। ব্যাংকগুলো যাতে ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা না করে, সে জন্য ব্যাংকমালিকদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জবাবে ব্যাংকমালিকেরা বলেছেন, ডলারের দাম কিছুটা বাড়ানো হলে তাতে সংকট কমতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতাদের সঙ্গে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ আলোচনা হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বিএবির পক্ষে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সভায় নেতৃত্ব দেন। বেশি দামে ডলার বিক্রি করার কারণে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকমালিকদের সঙ্গে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে ডলারের বাজার পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ও ব্যাংকের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সভায় বলা হয়, ডলারের সংকট এখন কমে এসেছে, সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। তাই কোনো ব্যাংক যাতে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় বিএবির পক্ষ থেকে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপত্তি জানালে হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন ব্যাংকমালিকেরা। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়ানো হলে হুন্ডিতে ডলারের দাম বাড়বে।
এরপর ১০ ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আরও বেশ কিছু ব্যাংকে পরিদর্শন চলছে। সেসব ব্যাংকে অনিয়ম পাওয়া গেলে তারাও শাস্তির আওতায় আসবে।
ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, কিছু শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকে কোনো সংকট নেই। শরিয়া ব্যাংকগুলোর সংকট দু-তিন মাসের মধ্যে কেটে যাবে।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকমালিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সভায় সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বৈদেশিক মুদ্রার দাম ও রিজার্ভের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কেও সভায় অবহিত করা হয়। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যাংকমালিকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ডলারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দাম রাখছে, অনেক ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের সঙ্গে এমডিদের দ্বন্দ্ব হচ্ছে। সব মিলিয়ে করপোরেট সুশাসন বজায় রাখতে ব্যাংকমালিকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ডলারের বেশি দাম রাখা সম্পর্কে মেজবাউল হক বলেন, যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি হবে। কার নির্দেশে তারা বেশি দাম রেখেছে, সেটা বিষয় না।
সভার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের অবহিত করেছে। আমরা এসব বিষয় এমডিদের জানাব।’
সভায় বিএবির পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান, ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফত। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, এ কে এম সাজেদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের সভায় উপস্থিত ছিলেন।