প্রকাশকালঃ
০৬ জুলাই ২০২৪ ০৩:২৪ অপরাহ্ণ ৫৯৬ বার পঠিত
সারাদেশে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। রাজধানীতে প্রতিদিনই সিএনজি পাম্পগুলোয় চোখে পড়ছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। তবে গ্যাস মিলছে না চাহিদামতো। অন্যদিকে, গ্যাস সংকটে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতেও ব্যাহত হচ্ছে রান্নার কাজ। কারণ, কারখানাগুলোর উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। যদিও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী দুই সপ্তাহে কেটে যাবে গ্যাস সংকট।
এদিকে, গ্যাস সংকটের ফলে প্রতিদিনই রাজধানীর সিএনজি পাম্পের সামনে দেখা মিলছে গাড়ির দীর্ঘ সারির। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও চাহিদামতো গ্যাস মিলছে না। আবার অনেক সময় গ্যাসের চাপ কম থাকায় পাম্পও বন্ধ থাকছে। এতে জনজীবনে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি আয়ও কমছে অনেকের। কয়েকদিন ধরেই এমন তীব্র গ্যাস সংকটে রাজধানীসহ পুরো দেশ।
সিএনজি পাম্পের সামনে অপেক্ষারত একজন বলেন, দুপুর ১২টা থেকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি। পাম্পে ঢোকার পর গ্যাসের চাপ উঠতে আরও প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করে সিএনজি পাম্পের একজন বলেন, গ্যাসের চাপ আছে মাত্র ৫০-৬০ একক। এই অবস্থায় গ্যাস দিলে যিনি ৪০০ টাকার গ্যাস নিচ্ছেন তিনি পাবেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার গ্যাস। এ জন্য গ্যাসের চাপ থাকা প্রয়োজন।
ভাড়ায় গাড়ি চালানো একজন বলেন, ‘সারাদিনে একবার গ্যাস নিলে আগে ৩-৪ হাজার টাকার ভাড়া মারতে পারতাম। আর এখন ২ হাজার টাকার ভাড়াও মারতে পারিনা।’ তবে পাম্পে এলেই যে গ্যাস মিলবে এটাও নিশ্চিত নয়। গ্যাসের জন্য অপেক্ষারত একজন বলেন, আড়াই-তিন ঘণ্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি তারপরও গ্যাস পাবো কিনা নিশ্চিত না। ভাড়াও মারতে পারছি না, নিজে চলা তো দূরের মালিকের প্রতিদিনেই জমার টাকাই উঠাতে পারছি না।
এদিকে, বাসাবাড়িতেও মিলছে না গ্যাস। যেখানে কিছু হলেও গ্যাস মিলছে, তা দিয়ে রান্নার কাজও হচ্ছে না। এজন্য বৈদ্যুতিক চুলা কিংবা সিলিন্ডারেই ভরসা রাখছেন অনেকে। এতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। এক গৃহিণী বলেন, সারাদিন যদি গ্যাস না থাকে তাহলে একদিকে বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক বিলও দেয়া লাগছে। আরেক গৃহিণী বলেন, আগে ২টা-আড়াইটার মধ্যে গ্যাস চলে আসতো, এখন একদমই গ্যাস মিলছে না।
অন্যদিকে, গ্যাস সংকট সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানাকে। যার ফলে অনেক কারখানার উৎপাদনও অর্ধেকে নেমে গেছে। এতে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বায়ারেরা (ক্রেতা প্রতিষ্ঠান) স্বল্প সময়ে অর্ডারগুলো দেয়। গ্যাস সংকটের কারণে আমরা সেই স্বল্প সময়ে অর্ডারগুলো সম্পন্ন করতে পারি না।
উদাহরণস্বরূপ, দেখা গেল বায়ার ৬০ দিন সময় দিলো, কিন্তু গ্যাস সংকটে আমরা কোনোভাবেই কিন্তু সেই অর্ডার সম্পন্ন করতে পারছি না। এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডার সম্পন্ন করতে না পারায় কিন্তু আমাদের ওপর বায়ারদের আস্থা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে আমেরিকার মার্কেটে ভিয়েতনাম কিন্তু এক নম্বরে চলে গেছে, যেখানে বাংলাদেশের এক নম্বরে থাকার কথা ছিল।
হিসেব বলছে, দৈনিক ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা যাচ্ছে ৩ হাজার ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা নেমে এসেছে আড়াই হাজারে। গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস জানায়, দৈনিক চাহিদার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসে চট্টগ্রামের এলএনজি টার্মিনাল থেকে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর কার্যক্রম বন্ধ আছে। ফলে সরবরাহ নেমে এসেছে অর্ধেকে। যা কাটতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা বলেন, দৈনিক গ্যাস দরকার ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে গ্যাস পাচ্ছি ১৪-১৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের স্বল্পতা থাকলে সেটি তো ভোগাবেই। এ জন্যই সিএনজি স্টেশনে গাড়ির লাইন, বাসাবাড়িতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো একবেলা রান্না করতে পারলেও আরেক বেলার রান্না হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।