প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের বরেণ্য নাগরিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁদের মতে, এই হামলা কোনো একক সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয়; এটি সরাসরি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের ওপর আঘাত।
সোমবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এবং মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। সভা শেষে হোটেলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
‘গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত’
প্রতিবাদ সভায় সংহতি প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ আঘাত এসেছে শুধু প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের ওপর নয়, আঘাত এসেছে গণতন্ত্রের ওপর। স্বাধীনভাবে চিন্তা ও কথা বলার অধিকারের ওপর আবার আঘাত করা হয়েছে।’
৭৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিক বলেন, তিনি সারাজীবন একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা তাঁর কল্পনার সঙ্গে মেলে না। তিনি আরও বলেন, ‘সব গণতন্ত্রকামী মানুষের এখন এক হওয়ার সময় এসেছে। শুধু একাত্মতা জানালেই হবে না, রুখে দাঁড়াতে হবে।’
‘মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারার চেষ্টা’
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল সংবাদমাধ্যমে কর্মরত মানুষদের হত্যা করা। তিনি অভিযোগ করেন, অফিসে কর্মব্যস্ত অবস্থায় চারদিক থেকে আগুন লাগানো হয় এবং ফায়ার সার্ভিসকে বাধা দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়।
তিনি বলেন, কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতি অপছন্দ হলেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে পারে না। এই সহিংসতা রোধ করা না গেলে শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, পুরো সমাজব্যবস্থা ও উন্নয়নের সম্ভাবনাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
জানুয়ারিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা
নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ তাঁর সমাপনী বক্তব্যে জানান, আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সারাদেশের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে একটি মহাসমাবেশ আয়োজন করা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এই হামলার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।
পরিকল্পিত অপরাধের অভিযোগ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এসব ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত অপরাধ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্লোগান ও শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নাম ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাঁর মতে, এতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারের ভেতরের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
জামায়াতে ইসলামীর সহ-সম্পাদক জুবায়ের বলেন, এই হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি দোষীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
সভায় আরও বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বক্তারা একযোগে বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্রের বিকাশে সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ সব পেশাজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এখন সময়ের দাবি। সভা শেষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনের মাধ্যমে তারা প্রতিবাদ জানান।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫