রেমিট্যান্সের নামে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যক্তি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৮ মার্চ ২০২৫ ০২:০৭ অপরাহ্ণ   |   ১০৮ বার পঠিত
রেমিট্যান্সের নামে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যক্তি

ঢাকা প্রেস নিউজ

 

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে করমুক্ত সুবিধার আইনি সুযোগ নিয়ে এক ব্যক্তি ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান তিনি। তবে ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় ও ঘটনার সময় উল্লেখ করেননি এনবিআর চেয়ারম্যান।
 

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের ‘অর্থনীতি-আলাপন: রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী, এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মহিদুল হাসান।
 

প্রত্যক্ষ কর বাড়লেও অর্থনৈতিক বৈষম্য কেন কমছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘প্রবাসীরা বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আনেন। আইন অনুযায়ী, তাদের উপার্জিত অর্থ আয়করমুক্ত। এটি প্রবাসী কর্মীদের উৎসাহিত করতে করা হয়েছে। সবাই শুনে অবাক হবেন, এমন একজন করদাতা আছেন, যিনি ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন, এবং তিনি দাবি করছেন যে এটি ওয়েজ আর্নার্স ইনকাম এবং করমুক্ত।’’
 

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘‘বৈষম্য কমার বদলে বাড়ছে, কারণ অনিয়মের জন্য এটা হচ্ছে। আগে আমরা এসব দেখিনি কিংবা বুঝিনি, অথবা দেখেও না দেখার ভান করেছি। তাদের সুযোগ দিয়েছি। এসবই বড় সমস্যা।’’
 

অন্যদিকে, ওই ব্যক্তির নাম জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘নাম বলা ভালো নয়। তবে অ্যাকশন নেওয়ার পর আপনারা জানতে পারবেন।’’
 

সভায় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা করদাতাদের ভয়ভীতি দূর করার জন্য, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি এবং কর-সংক্রান্ত সব হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত অনলাইনে প্রকাশের অনুরোধ করেন।
 

এর আগে, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান পুঁজিবাজার, বীমা, এবং আর্থিক খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেয়ার বিক্রি করে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা হলে তার ওপর ১৫% মূলধন কর মওকুফের দাবি করে। ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এই সুবিধা দিতে বলেন, যাতে মন্দা বাজারকে টেনে তোলা যায়।
 

এ প্রস্তাবে সায় না দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত অনেক কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বাজারে দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি আস্থাহীনতার মূল কারণ। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়েছেন। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি করতে হবে, তাহলেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। এটি না হলে কোনো কর সুবিধা কাজ করবে না।’’
 

পুঁজিবাজারের দুর্বলতা দূর করতে সুশাসনের ঘাটতি পূরণের পরামর্শ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)কেও দায়ী করেন।
 

বীমা খাতকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) নীতিসহায়তা চায়। সংগঠনের সভাপতি সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘‘বীমা খাত অবহেলিত, এর জন্য আমরা যেমন দায়ী, তেমনি সরকারও দায়ী।’’
 

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বীমা খাতে কোনো সুনাম নেই। এ খাতে গভর্ন্যান্সের ‘জি’ও নেই। বীমা কোম্পানিগুলো মনে করে, গ্রাহকের টাকা তাদের। কিন্তু মানুষের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া তাদের দায়িত্ব, তা ভুলে যায়।’’
 

এছাড়া, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) তাদের বাজেট প্রস্তাবে ভ্যাট সফটওয়্যারের বাস্তবায়ন, ঋণ অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার এবং মূসক নিরীক্ষা কার্যক্রমের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আশ্বাস দেন, আগামী অর্থবছর থেকে এলসি বা ঋণপত্র খোলার ওপর আবগারি শুল্ক কমানো হবে।