থাইল্যান্ড ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া

প্রকাশকালঃ ২৮ মার্চ ২০২৪ ০১:৪১ অপরাহ্ণ ১৯২৪ বার পঠিত
থাইল্যান্ড ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া

থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা তার সুন্দর সৈকত, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত।থাইল্যান্ডের উত্তরে পাহাড়, পূর্বে মালয় উপদ্বীপ, দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগর এবং পশ্চিমে আন্দামান সাগর রয়েছে।দেশটিতে বন, জলাভূমি এবং কৃষি জমি সহ বিভিন্ন ধরণের ভূদৃশ্য রয়েছে। থাইল্যান্ড একটি মোহনীয় গন্তব্য, যেখানে সংস্কৃতি, প্রাকৃতি এবং সাহসের সমন্বিত মিশ্রণ পাওয়া যায়। 


থাইল্যান্ড ভিসা
থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা বা থাইল্যান্ড ভ্রমণ ভিসা সাধারনত সিঙ্গেল এন্ট্রি ৩ মাসের ও মাল্টিপল এন্ট্রি ৬ মাসের মেয়াদের হয়। উভয় ভিসাতেই প্রতি এন্ট্রিতে থাইল্যান্ডে আপনি সর্বোচ্চ ৬০ দিন থাকতে পারবেন।

 

 থাইল্যান্ড ভিসা আবেদনের ধাপগুলো কি কি ?

 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করা
থাইল্যান্ড ভিসা আবেদন ফর্ম পুরন করা
ভিসা আবেদন জমা দেয়া
পাসপোর্ট সংগ্রহ বা ফেরত নেয়া 
থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা বা থাইল্যান্ড ভ্রমণ ভিসা আবেদনের প্রথম ধাপ হচ্ছে আবেদন জমা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করা।

 

থাইল্যান্ড ভিসা পেতে কি কি কাগজপত্র লাগে ?

থাইল্যান্ড ভিসা আবেদনের ফরম
পাসপোর্ট
২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩.৫ সে.মি.* ৪.৫ সে.মি. মাপের) 
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট (মোট ব্যালেন্স উল্লেখ থাকা ভাল তবে আবশ্যক না)
পেশার প্রমাণপত্র (ট্রেড লাইসেন্স, NOC, স্টুডেন্ট আইডি ইত্যাদি)
ভিসা রিকুয়েস্ট লেটার
এয়ার টিকেট বুকিং
হোটেল বুকিং
ট্রাভেল আইটেনারি বা ভ্রমণ পরিকল্পনা
পাসপোর্ট এর ডাটা পেইজের ফটোকপি (ছবির পাতা)
জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
সর্বশেষ থাই ভিসা কপি (যদি থাকে)
ম্যারেজ সার্টিফিকেট (যদি স্বামী স্ত্রী আবেদন করেন)
১৮ বছরের নিচে হলে অভিভাবকের সম্মতিপত্র
উপরে উল্লিখিত সকল ডোকুমেন্টস ইংরেজিতে হতে হবে। কোনটা যদি বাংলা বা অন্য ভাষায় থাকে তাহলে ইংরেজিতে নোটারি করে নিতে হবে।

 

ভিসা আবেদনের ডকুমেন্টগুলোর বিস্তারিত গাইডলাইন
থাইল্যান্ড ভিসা আবেদনের জন্য যে সব কাগজপত্র পাসপোর্ট ও ফর্মের সাথে দিতে হবে তা উপরে সংক্ষেপে বলা হয়েছে। এখন এখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হল যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

 

থাইল্যান্ড ভিসা আবেদনের ফরম
ভিসা আবেদন করার জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল সঠিকভাবে ও নির্ভুলভাবে ভিসা আবেদন ফরমটি পুরন করা। প্রথমেই এই লিংক থেকে ভিসা আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে নিন। তারপর কোন পিডিএফ রিডার বা এডিটর দিয়ে সঠিকভাবে পূরন করে নিন। 


পাসপোর্ট
বিদেশ ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই সবার আগে পাসপোর্ট লাগবে। তাই পাসপোর্ট না আগে থাকলে পাসপোর্ট করে নিন।
পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবেপাসপোর্টে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পাতা থাকতে হবে ভিসা ও ইমিগ্রেশন সিলের জন্য পুরোনো পাসপোর্ট যদি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সেইগুলোও নতুন পাসপোর্ট এর সাথে দিতে হবে। 

 

ব্যাংক স্টেটমেন্ট
থাইল্যান্ড ভিসার গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। এবং একাউন্টে কারেন্ট ব্যালেন্স কমপক্ষে ২০,০০০ থাই বাথ বা বাংলাদেশি টাকায় ৬০,০০০ টাকা থাকতে হবে। আর ফ্যামিলি হিসেবে আবেদন করলে কমপক্ষে .৪০,০০০ থাই বাথ বা বাংলাদেশি টাকায় ১,২০,০০০ টাকা থাকতে হবে একাউন্টে।  
 

 

ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
থাইল্যান্ড ভিসার জন্য শুধু ব্যাংক স্টেটমেন্টেই হবে না সাথে ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট/লেটার ও লাগবে। ব্যাংক সলভেন্সীতে কারেন্ট ব্যালেন্স উল্লেখ থাকা ভাল, যদিও এটা বাধ্যতামূলক না।

আর ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ব্যাংক সলভেন্সি দুটোই অরিজিনাল কপি জমা দিতে হবে।

 

পেশার প্রমাণপত্র
যেকোন দেশের ভিসা আবেদনের জন্য পেশার প্রমাণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।আপনি যে পেশায় আছেন তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি দেখাতে হবে। 

 

ট্রাভেল আইটেনারি বা ভ্রমণ পরিকল্পনা
এটা হল আপনি থাইল্যান্ডে কতদিন থাকতে চান ও কোথায় কোথায় যেতে চান তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এটা আপনি চাইলে নিজে নিজে বানিয়ে দিতে পারেন অথবা অনলাইন থেকে ফরম্যাট খুঁজে দিতে পারেন। 
 

 

নোটারাইজেশন
উপরে উল্লিখিত সকল ডকুমেন্টস ইংরেজিতে হতে হবে। কোনটা যদি বাংলা বা অন্য ভাষায় থাকে তাহলে ইংরেজিতে নোটারি করে নিতে হবে। 

 

থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা আবেদন ফরম পুরন করা
সব ডকুমেন্টস জোগাড় হয়ে গেলে এখন আপনাকে থাইল্যান্ড ভিসা ফরম পূরণ করতে হবে। থাইল্যান্ডের ভিসা ফরম খুবই সংক্ষিপ্ত এক পাতার একটি ফরম। তাই খুব সহজেই পূরণ করতে পারবেন। প্রথমে ভিসা ফরমটি ডাউনলোড করে নিন সাইমন গ্লোবাল অথবা ভিএফএস গ্লোবাল এর সাইট থেকে। তারপর ফরম পুরনের নির্দেশনাটি ডাউনলোড করে নিন সাইমন গ্লোবাল অথবা ভিএফএস গ্লোবাল এর সাইট থেকে।  

 

থাইল্যান্ড ভিসা খরচ
থাইল্যান্ড ভিসার প্রকার ও এন্ট্রির উপর ভিত্তি করে থাইল্যান্ড ভিসা ফি বা থাইল্যান্ড ভিসা খরচ কম বেশি হয়। আমি এখানে শুধু বাংলাদেশিদের জন্য জনপ্রিয় থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা ও ট্রানজিট ভিসার ফির লিস্ট এখানে দিচ্ছি।


টুরিস্ট ভিসা    ৩৫০০    সিঙ্গেল    ৩ মাস ।টুরিস্ট ভিসা    ১৭০০০   মাল্টিপল    ৬ মাস । ট্রানজিট ভিসা    ৩০০০    সিঙ্গেল    ৩ মাস । ট্রানজিট ভিসা    ৫৫০০    ডাবল    ৬ মাস
 

এই ভিসা ফি বাদেও ভিসা আবেদন গ্রহণকারীদের (ভিএফএস, সাইমন ইত্যাদি) এদের সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। প্রসেসিং ফি ১২৬০ টাকা। মানে আপনি ৩ মাস মেয়াদী সিঙ্গেল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসা আবেদন করতে খরচ হবে ৩৫০০+১২৬০=৪৭৬০ টাকা।
 

থাইল্যান্ড ভিসা আবেদন জমা দেয়ার নিয়ম
সব ডকুমেন্টস ও ফর্ম রেডী হয়ে গেলে এখন কাজ হল ভিসা ফরম ও কাগজপত্র থাইল্যান্ড ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দেয়া। এখন দেশে দুইটি প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ড ভিসা আবেদন জমা নেয়। একটা হল সাইমন গ্লোবাল ও অপরটি হল ভিএফএস গ্লোবাল। ভিএফএস গ্লোবাল শুধু ঢাকায় জমা নেয় আর সাইমন গ্লোবাল এর ঢাকা ছাড়াও সিলেট ও চট্টগ্রামেও ভিসা আবেদন কেন্দ্র আছে। 

 

পাসপোর্ট সংগ্রহ বা ফেরত নেয়া
আবেদন জমা দেয়ার পর সেদিনই যে কেন্দ্রে আবেদন জমা দিয়েছেন সে কেন্দ্র থেকে একটা কল পাবেন যে আপনার আবেদন জমা হয়েছে আর তারা বলে দিবে যে আগামী কয়েকদিনে থাইল্যান্ড এম্বাসী থেকে আবার কল পাবেন। এই কল আপনি নিজে জমা দেন বা কোন এজেন্সি দিয়ে জমা দেন উভয় ক্ষেত্রেই এই কল পাবেন।  

 

ভিসা পাবার পর
থাইল্যান্ড ৩ মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা ইস্যু করে। এই তিনমাস হল আপনার থাইল্যান্ডে ঢোকার জন্য নির্ধারিত সময়। এই তিনমাসের মধ্যে যেদিন ঢুকবেন সেদিন থেকে ৬০ দিন বা ২ মাস থাকার অনুমতি পাবেন। 

 

থাইল্যান্ড একটি জায়গা। এটিতে চমৎকার এবং অত্যাশ্চর্য দৃশ্য রয়েছে যা আপনাকে বিস্মিত করবে।