|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:১৯ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:১০ অপরাহ্ণ

নৃগোষ্ঠী ভাষার বিলুপ্তির ঝুঁকি ও সংরক্ষণ উদ্যোগ


নৃগোষ্ঠী ভাষার বিলুপ্তির ঝুঁকি ও সংরক্ষণ উদ্যোগ


ঢাকা প্রেস নিউজ

 

বাংলাদেশে ৪০টিরও বেশি ভাষার অস্তিত্ব থাকলেও বহু নৃগোষ্ঠী ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বায়ন, নগরায়ণ ও মাতৃভাষায় শিক্ষার অভাবের কারণে ভাষাগত বৈচিত্র্য সংকটের মুখে পড়ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভাষা সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, তবে কার্যকর নীতিমালা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
 

শনিবার রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘বহুভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান সুসান ভাইস। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম।
 

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ শুধু একটি ভাষার আবাসস্থল নয়, বরং এখানে ৩৫টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন ভাষার প্রচলন রয়েছে। প্রতিটি ভাষাই জাতির সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে। বহুভাষিকতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বহুত্ববাদী সমাজের ভিত্তি তৈরি করে, যেখানে প্রতিটি ভাষা তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোককাহিনী এবং শিল্প-সংস্কৃতির সমৃদ্ধি বহন করে।
 

তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়ন, নগরায়ণ এবং মাতৃভাষায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব বিশ্বব্যাপী বহু ভাষার বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, দেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে তাদের কণ্ঠস্বরকে শ্রবণযোগ্য করা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা জরুরি। সরকার বহুভাষিকতা সংরক্ষণের জন্য কার্যকর নীতি গ্রহণের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে।
 

সেমিনারে ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান সুসান ভাইস বলেন, ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি সাংস্কৃতিক পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাতৃভাষায় পাঠদান শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলকে শক্তিশালী করে এবং সামাজিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। তিনি উল্লেখ করেন, নৃগোষ্ঠী ভাষাগুলোতে নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর প্রকৃতি, চিকিৎসা, ঐতিহ্য এবং জীবনধারার অনন্য জ্ঞান লুকিয়ে থাকে, যা ভাষা হারিয়ে গেলে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ৫০টিরও বেশি জাতিগত গোষ্ঠী ও ৪০টিরও বেশি ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। তবে বহুভাষিক সমাজে একটি ভাষার আধিপত্য অন্য ভাষাগুলোর টিকে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। বেশিরভাগ নৃগোষ্ঠী জনগোষ্ঠী বাংলা ভাষার আধিপত্যের কারণে নিজেদের মাতৃভাষা হারানোর মুখে পড়েছে।
 

তিনি আরও বলেন, নৃগোষ্ঠীর জনগণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাধ্য হয়ে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করছে, যা তাদের মাতৃভাষাকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর ফলে কিছু ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে, কিছু ভাষা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং কিছু ভাষা বিভিন্ন মাত্রায় বিপন্ন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ বিষয়ে ভাষাগুলোকে নথিভুক্ত করা, পুনরুজ্জীবিত করা ও প্রচার করার কাজ করে যাচ্ছে।
 

দিনব্যাপী সেমিনারটিতে চারটি অংশে বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ‘বহুভাষা ও আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ’ বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন ডেভিড এ পিটারসন, ‘ভাষাগত বৈচিত্র্যের দেশে বহুভাষা’ বিষয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এম সাজ্জাদুল হক, ‘বহুভাষা ও আন্তঃসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষে ইংরেজি পাঠদান’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ইবরাহিম হোসেন এবং ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রসারে বহুভাষার ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা করেন একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী।
 

সেমিনারের আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা নৃগোষ্ঠী ভাষা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সরকারের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান জানান।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫