|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৪ আগu ২০২৫ ০২:৩১ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বিক্রির প্রত্যাশা ঈদে


সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বিক্রির প্রত্যাশা ঈদে


দ উপলক্ষ্যে সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা শাড়ি-লুঙ্গি তৈরিতে কর্মব্যস্ত থাকলেও পাইকারি হাটগুলোতে সেভাবে বেচাকেনা জমে ওঠেনি। গত ঈদে যেখানে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল, এবার তা  সাড়ে ৩ হাজার কোটির ওপরে উঠবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাঁচামালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ও থ্রি-পিসের ব্যবহার বাড়ায় শাড়ি-লুঙ্গি বানিয়ে কাঙ্ক্ষিত লাভ হচ্ছে না তাঁতিদের।

সিরাজগঞ্জ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম সুতি শাড়ি তৈরির জেলা। সরকারি ভাবে এ জেলার ব্র্যান্ডিং নাম ‘তাঁত কুঞ্জ’। জেলার শাহজাদপুর, বেলকুচি, এনায়েতপুর, সদর ও উল্লাপাড়ায় ৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় এই তাঁতশিল্পের অবস্থান। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বর্তমানে প্রায় ৪৬ হাজার ৪০৩টি তাঁতি পরিবার অন্তত ২০ হাজার তাঁত কারখানায় প্রায় ৪ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯টি হস্তচালিত ও ইঞ্জিনচালিত তাঁত পরিচালনা করছে। এ শিল্পে শাড়ি-লুঙ্গি, ধুতি, গামছা, থ্রি-পিস উৎপাদন, বিক্রিসহ  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ২০ লাখ ৮ হাজার ১৫৬ জন জড়িত রয়েছে। কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই তৃণমূল উদ্যোগে পৃথিবীতে এমন শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল অনেকটাই বিরল।

বর্তমানে এই শিল্পের পণ্য দুই ঈদ, পূজা, বাংলা নববর্ষসহ মানুষের সারা বছরের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়ে থাকে। ঈদের দেড় মাস আগে থেকে চলছে তাদের মহাপ্রস্তুতি। তাঁত কারখানাগুলো এখন মাকু দিয়ে কাপড় তৈরির খট-খট শব্দে মুখরিত। তৈরি হচ্ছে বাহারী নকশার সুতি, সিল্ক, রেশমি, জামদানি শাড়ি ও নানা ধরনের লুঙ্গি। তবে শাহজাদপুর, সোহাগপুর, এনায়েতপুর কাপড়ের হাটগুলোতে নেই তেমন চাঙ্গাভাব। রং, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামালের অতিমূল্য এখনো ভাবাচ্ছে তাদের।

এ ব্যাপারে এনায়েতপুর থানার খুকনী গ্রামের ফিরোজ উইভিং-এর স্বত্ব্বাধিকারী হাজি অনিক হাসান ফিরোজ, হাজি মো. লালমিয়া ও মিটন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মাঈদুল ইসলাম মিন্টু জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদের কারখানাগুলোতে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মূল্যের বাহারী নকশার শাড়ি তৈরি হচ্ছে। অন্যান্য বছর পাইকারি হাটে তেমন নিয়ে যেতে হয়নি। সারা দেশের ব্যাপারীরা বাড়িতে এসেই কিনত বেশ ভালো দাম দিয়ে। তবে এবার অতটা বাজার ভালো যাচ্ছে না। হাটে-বাড়িতে বিক্রি হচ্ছে ঠিকই তবে লাভের হার কম। আবার কাঁচামাল, রং, সুতাসহ অন্যান্য জিনিসের দাম অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার কাঙ্ক্ষিত বাজার পাচ্ছি না আমরা।

গোপালপুর গ্রামের তাঁতশ্রমিক সোলায়মান হোসেন, উমর আলী, শিবপুরের শুকুর আলী, গোপিনাথপুরের নুরু মিয়া জানান, ঈদ মৌসুমের আগে সকাল ৮টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতাম। এখন সেখানে সেহেরি খেয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছি। কারণ যত কাজ করব তত পারিশ্রমিক পাব। উপার্জিত এ অর্থ দিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ করব, পোশাক কিনব। 

নরসিংদী জেলার বাবুর হাটের ব্যাপারী অজয় দেবনাথ ও হবিগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী জহরলাল সরকার জানান, আমাদের দেশীয় তাঁতে তৈরি শাড়ির ব্যবহার আগের চেয়ে কমেছে। অনেকেই এখন থ্রি-পিসের প্রতি ঝুঁকেছে। তাই গতবার যেখানে আমরা ২ হাজার থেকে ৩ হাজার পিস শাড়ি কিনেছি। এবার তা ৪০০/৫০০ টিতে নামিয়ে এনেছি।

এদিকে তাঁতিদের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়ে বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম পাওয়ারলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাজি বদিউজ্জামান বদি জানান, এবার বাজার চাঙ্গা না থাকলেও ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। তবে আশাতীত মুনাফা হবে না। কারণ আমাদের উৎপাদিত পণ্যের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও নতুন বাজার সেভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না। তাই বাজার সৃষ্টির দিকে সরকারের নজর দিতে হবে। পাশাপাশি পণ্য তৈরির কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও নজরদারি করতে হবে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫