প্রকাশকালঃ
১০ এপ্রিল ২০২৩ ০১:১৪ অপরাহ্ণ ৩৪১ বার পঠিত
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে দুটি বিবদমান সশস্ত্র আঞ্চলিক দলের মধ্যে গোলাগুলিতে আটজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর আরো বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কায় আশপাশের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। গত শনিবার সকালে ঘটনাস্থল খামতাংপাড়ার ৯৩টি পরিবার গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পর গতকাল রবিবার পার্শ্ববর্তী পাইংক্ষংপাড়ার ৪০টি পরিবার জীবন বাঁচাতে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরে চলে আসে। রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে জানান, নতুন ওই উদ্বাস্তুদেরও রোয়াংছড়ি সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশপাশের আরো দুই-একটি পাড়ার লোকজনও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। যেকোনো সময় তারাও গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে পারে। বর্তমানে আশ্রিতদের খাবার এবং অন্যান্য সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন করে আরো লোকজন গ্রাম ছেড়ে উপজেলা সদরে চলে এলে টয়লেটসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি কষ্টকর হতে পারে।
এদিকে গতকাল সকালে নিহত আটজনকে বম সোশ্যাল কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে কবরস্থ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে রনিনপাড়ায় এবং দুজনকে পাইংক্ষংপাড়ায় কবর দেওয়া হয়েছে। রোয়াংছড়ি থানা সূত্র জানায়, গোলাগুলিতে আটজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে ওই ঘটনার পর এ পর্যন্ত সাড়ে তিন শর বেশি আশ্রিতকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বান্দরবান সদর জোনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অস্থায়ী চিকিৎসাশিবির বসিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
বান্দরবান জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় রোয়াংছড়ি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান, বর্তমানে আশ্রিতদের খাবার এবং অন্যান্য সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন করে আরো লোকজন গ্রাম ছেড়ে উপজেলা সদরে চলে এলে টয়লেট ব্যবস্থাপনাসহ তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে খামতাংপাড়া এলাকায় দুই আঞ্চলিক দল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরে মধ্যে গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটজন নিহত হয়।
রোয়াংছড়িতে চিকিৎসাশিবির :
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের ভয়ে দুর্গম অঞ্চলের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনসাধারণকে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপত্র দিয়েছে বান্দরবান সেনা জোন। গতকাল রবিবার সকালে বান্দরবান সেনা জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে এই চিকিৎসাশিবিরের আয়োজন করা হয়। বান্দরবান সেনা জোনের রেজিমেন্টাল মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. আসাদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর এ এস এম মাহমুদুল হাসান।
চিকিৎসাশিবিরে মূলত পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের অত্যাচারে উপজেলা সদরে পালিয়ে আসা খিয়াং, বম জনসাধারণ ও দুর্গম এলাকায় দীর্ঘকালীন রোগাক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশুদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই চোখের সমস্যা, জটিল নাক-কান-গলা ও নারী-শিশু রোগের রোগী। দীর্ঘকালীন জটিল চক্ষু রোগীদের রোগ নির্ণয় করে তালিকা করা হয়। পরে তাদের শল্য চিকিৎসা ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
মেজর এ এস এম মাহমুদুল হাসান জানান, এর আগেও বান্দরবান সেনা জোনের আওতায় রোয়াংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলার দুর্গমে থাকা দরিদ্র লোকজনের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসাশিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। গত ১২ মার্চ বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গেলে কেএনএফ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পাড়াবাসীকে পাড়া ত্যাগ করতে বাধ্য করে। সেনা টহলদলের ওপর হামলা চালালে একজন সেনা সদস্য নিহত হন। শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ভবিষ্যতেও সেনাবাহিনীর এই ধরনের জনহিতকর কার্যক্রম চলমান থাকবে।