|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৬ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১২:২৮ অপরাহ্ণ

সর্বাত্মক প্রচারণা, কেন্দ্র কমিটি গঠন ও পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ চলছে


সর্বাত্মক প্রচারণা, কেন্দ্র কমিটি গঠন ও পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ চলছে


অনলাইন ডেস্ক-ঢাকা প্রেস



আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো এখন পূর্ণমাত্রায় নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। গণভোট, সংস্কার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চলমান উত্তেজনার মাঝেও ভোটের কার্যক্রমে গতি এসেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পরপরই কার্যক্রম শুরু করায় জামায়াতে ইসলামী প্রায় সব ধরনের নির্বাচনী প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে। বিএনপি এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি এবং পোলিং এজেন্ট নিয়োগ বা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে এনসিপি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণে ব্যস্ত সময় পার করছে।

জামায়াতের ব্যাপক প্রচারণা ও সংগঠন কাঠামো

জামায়াত গত ফেব্রুয়ারি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে। জুলাইয়ের মধ্যে ২৯৮টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ৪৩ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কেন্দ্র কমিটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে চলছে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
 

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম জানান, পোলিং এজেন্টদের দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ শিগগিরই শুরু হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারের কাছে পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, “বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শাসন জনগণ দেখেছে। এবার জামায়াতকে সুযোগ দিন।”
 

তবে নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়মের আশঙ্কা করে তিনি জানান, প্রয়োজনে ভোট রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে।
 

কৌশলে পরিবর্তন: শোভাযাত্রা নয়, বাড়ি বাড়ি প্রচার

জামায়াত এবার বড় আকারের শোভাযাত্রা বা গাড়িবহর মহড়া থেকে সরে আসছে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় মৃত্যুর ঘটনাগুলোর পর এ ধরনের কর্মসূচি পরিহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তনের বার্তাকে সামনে রেখে ঘরে ঘরে প্রচারে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
 

জুলাই সনদকে ঘিরে যুগপৎ কর্মসূচি পালনকারী আট দলের সঙ্গে আসন সমঝোতারও প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। সমঝোতা হলে প্রায় ১০০টি আসন ছেড়ে দিতে পারে, তবে সমঝোতা না হলেও যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য সব আসনেই জোর প্রচার চলছে।


তরুণ ও নারী ভোটারদের লক্ষ্য করে কৌশল

প্রচারণা কৌশল নির্ধারণে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে তিন কোটি তরুণ ভোটার এবং নারী ভোটারকে প্রধান গুরুত্ব দিয়েছে জামায়াত। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবিরের সাফল্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, তরুণদের মধ্যে বিএনপির প্রতি বিরক্তি এবং পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। তাই ছাত্রশিবির ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থাকে তরুণ ভোটারদের কাছে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
 

দলের ইশতেহারে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকবে এবং প্রার্থী তালিকায় তরুণদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রনেতাদের সংসদীয় আসনে প্রার্থী করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
 

নারী ভোটারদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে মহিলা শাখা ওয়ার্ডভিত্তিক নারী সমাবেশ করছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি এবং নারীদের সহায়তা পরিকল্পনা ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এবার দুই-একজন নারী প্রার্থী দেওয়ারও বিষয়টি বিবেচনায় এসেছে।


আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু ভোট টানার প্রচেষ্টা

জামায়াত নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতৃত্বের ভোট তারা নাও পেতে পারে, কিন্তু সাধারণ সমর্থকদের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাদের দাবি, ৫ আগস্টের পর জামায়াত কারও ব্যবসা, বাড়ি বা জমি দখল করেনি—যা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা তৈরি করেছে।
 

সংখ্যালঘু ভোটারদের পক্ষে টানতেও সক্রিয় হয়েছে দলটি। খুলনাসহ কয়েকটি এলাকায় ‘সনাতন সমাবেশ’ করেছে এবং এবার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কয়েকটি আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ার কথাও বিবেচনায় রয়েছে। জামায়াতের লক্ষ্য, অন্তত ৫–১০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট অর্জন করা।


বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি বিরোধী প্রচার

৫ আগস্টের পর বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগের প্রেক্ষিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এ ইস্যুতে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের দাবি, “আসন্ন নির্বাচন সুশাসন বনাম চাঁদাবাজির লড়াই।” যদিও জামায়াতের কিছু এলাকায় একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে, দলীয় নেতারা জানান, এসব ঘটনায় দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


সারসংক্ষেপ

  • জামায়াত সবচেয়ে এগিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে

  • বাড়ি বাড়ি প্রচার, বড় শোভাযাত্রা নয়

  • তরুণ, নারী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের মূল লক্ষ্য

  • আসন সমঝোতা হলেও প্রচারে ঘাটতি নেই

  • চাঁদাবাজিবিরোধী বক্তব্যে বিএনপি বিরুদ্ধ প্রচার
     

আসন্ন নির্বাচনে জামায়াত নিজেদেরকে বিকল্প শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। তবে অতীত নির্বাচনী ফলাফল ও রাজনৈতিক বাস্তবতা কতটা তাদের অনুকূলে যায়, তা এখন সময়ের অপেক্ষা।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫