|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪৫ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০১:০১ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে রমরমা বালুর ব্যবসা


কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে রমরমা বালুর ব্যবসা


ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বাল্কহেডে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে নদের ডান তীর ঘেষে কয়েকটি পয়েন্টের মাধ্যমে বালু বিক্রির উৎসব চলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকাবাসীর কথায় তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে বালুর ব্যবসা। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন অবকাঠামো, আবাদী জমি এবং হাজার হাজার বসতবাড়ি। অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙ্গে অন্তত ৫শতাধিক পরিবার তাদের বাড়ী-ভিটা হারিয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। দেখে না দেখার ভান করে চলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
 


জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাধীন রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর থেকে রমনা ইউনিয়নের ভরটÍগ্রাম পর্যন্ত এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরই মধ্যে ওই এলাকাসমুহে কয়েক দফায় ব্লক পিচিং এ ধসও দেখা দিয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে তা মেরামত করে। নদী ভাঙন রোধ এবং ডান তীর রক্ষা প্রকল্প অক্ষত রাখতে ওই এলাকা সমুহে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বর্তমানে রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া জামেরতল এবং রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাচকোল বাজার থেকে ফকিরেরহাট পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিক্রির উৎসব করছে এলাকার প্রভাবশালীরা। প্রভাব খাটিয়ে এলাকাসীর কথায় কর্ণপাত না করে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু ও মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। 
 


এলাকাবাসী ওই এলাকায় বালু উত্তোলন নিষেধ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। এতে একদিকে হুমকির মুখে পড়েছে ডান তীর রক্ষা প্রকল্পসহ হাজার হাজার একর আবাদী জমি ও জনবসতি। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত বাধ রাস্তাটি বালু বহনকারী গাড়ীর চাকায় ভেঙ্গে নিশ্চিন্ন হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের এলাকার নিশ্চিত ক্ষতি দেখেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেনা অসহায় এলাকাবাসী। মুখ খুলে কোথাও কথা বললেই হুমকি আসছে বলেও জানান স্থানীয়রা। ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙ্গে অন্তত ৫শতাধিক পরিবার তাদের বাড়ী-ভিটা হারিয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ভাবে বালু বিক্রির উৎসব চললেও অজ্ঞাত কারনে নিরব ভুমিকা পালন করছে কর্তৃপক্ষ।

 


সরেজমিনে, গত শুক্রবার বিকেলে রাণীগঞ্জ গেলে উত্তোলিত বালুর দৃশ্য চোখে পড়ে। কাচকোল বাজার থেকে ফকিরেরহাট এলাকা পর্যন্ত ৬-৭টি এবং দক্ষিণ খরখরিয়া জামেরতল এলকায় একটি বালুর পয়েন্ট দেখা যায়। এসময় কালিরকুড়া এলাকায় ২টি পয়েন্টের সামনে স্থানীয়দের দেয়া বাঁশের ব্যারিগেট চোখে পড়ে। এসময় ওই এলাকার দুলাল মিয়া, জহির আলী, দিনেশ চন্দ্র, আবু তালেব, জাফর আলী, ফিরোজ, আসাদ, মজনু, আফজাল হোসেনসহ অনেকে জানান, সামনের জমিগুলোতে চর সৃষ্টি হলে আমাদের এলাকায় ভাঙ্গনের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও বাম তীরে সৃষ্ট চর থেকে আমরা নানান সুবিধা পেয়ে থাকি। 
 


ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙ্গে অন্তত ৫শতাধিক পরিবার তাদের বাড়ী-ভিটা হারিয়েছে। বর্তমানে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে চর তো দুরের কথা ডান তীর রক্ষা প্রকল্প যে কোন সময় ছুটে যেতে পারে। এছাড়াও সারাদিন বালু পরিবহনের ফলে রাস্তার ধুলায় আমরা থাকতে পারি না। একারণে রাস্তায় ব্যারিগেট দিয়ে বালু পরিবহন করা বন্ধ করা হয়েছিল, পরবর্তীতে পয়েন্ট মালিকরা তা খুলে দেয়। 


প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম, মঞ্জু হাজি, লিটন, মান্নান(বাচ্চু), আজাহার আলী, আইজুল হক, আসলাম মেম্বারসহ অনেকেই এ ব্যবসার সাথে জড়িত বলে এলাকাবাসী জানায়। পাশ্ববর্তী ফাতেমা বেগম নামের এক নারী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বাড়ীতে শান্তি করে একটু ভাত পর্যন্ত খেতে পারি না, বিছানা-পাতি একদম শেষ বালুর জন্য।

 

বালু পয়েন্ট ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোঃ আব্দুল করিম বলেন, মঞ্জু হাজির পয়েন্টে আমার একটি শেয়ার দেয়া আছে। এর বেশী আমি আর কিছু জানি না।

 

এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো রাকিবুল হাসান বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি বললেন, জানলাম। আমরা ছবি টবি নিয়ে প্রশাসনকে জানায় দিব। আমাদের তো পুলিশ নেই, তাদের জানাতে হবে।

 

চিলমারী নৌ-ফাড়ি থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ ফেরদৌস আলী জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়টি তার জানা নেই। খোজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫