ঢাকা প্রেস নিউজ
দেশের ব্যাংক খাতে যে বিপুল পরিমাণ মন্দ ঋণ সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রকৃত আর্থিক মূল্য দিয়ে ঢাকা মেট্রো লাইন-৬ (এমআরটি-৬) এর মতো ১৪টি ‘মেট্রো সিস্টেম’ কিংবা ২৪টি ‘পদ্মা সেতু’ নির্মাণ করা সম্ভব হতো। একটি শ্বেতপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও ব্যবস্থাপনায় চরম অব্যবস্থার দিকটি তুলে ধরে।
প্রতিবেদনটি সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও, রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। শ্বেতপত্রটি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক ঋণ প্রদানে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট সংকট আরও প্রকট হয়েছে। আলোচ্য সময়ে যে পরিমাণ ঋণ মন্দ ও বিপর্যস্ত হয়েছে, তা দিয়ে ঢাকা মেট্রো লাইন-৬ এর মতো ১৪টি প্রকল্প অথবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
এই ঋণখেলাপি এবং উচ্চ পর্যায়ের আর্থিক কেলেঙ্কারি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এতে মূলধন উৎপাদনশীল খাতের পরিবর্তে অনুৎপাদনশীল খাতে প্রবাহিত হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এক বিরাট বাধা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঋণের নামে অবৈধ অর্থ উত্তোলন, বিদেশে অর্থপাচার, এমনকি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ব্যাংক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে, যার চড়া মূল্য আজ পুরো দেশকে দিতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনে প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ভয়াবহ দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১০ বছরে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভিসা প্রাপ্তির জন্য হুন্ডির মাধ্যমে ১৩.৪ লাখ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। এই পরিমাণ অর্থ ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণ ব্যয়ের চার গুণ।
সিন্ডিকেটের এই শোষণমূলক কার্যক্রমের কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা ন্যায্য কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এ প্রতিবেদন দেশের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।