নব্য আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা: নেতৃত্বে থাকবেন না শেখ হাসিনা?

ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন কৌশলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে—আওয়ামী লীগ থাকবে ঠিকই, কিন্তু নেতৃত্বে থাকবেন না শেখ হাসিনা। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ ও পরিচিত নেতারাও এই কাঠামো থেকে বাদ পড়বেন। এক দল পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা-নেত্রীকে সামনে রেখে একটি তথাকথিত ‘রিফাইন্ড’ বা নব্য আওয়ামী লীগ গঠনের পরিকল্পনা বেশ এগিয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে।
চক্রান্ত না প্রতারণা?
আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব এই উদ্যোগকে প্রতারণা এবং দল ধ্বংসের গভীর চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। ভারতের কয়েকজন কূটনীতিকও উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন—শেখ হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, নতুন যে নেতাদের নাম উঠে আসছে, তাদের অনেকেরই ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ এবং কয়েকজন পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত।
এক সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, "বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দিল্লির সরাসরি ভূমিকা নেই, তবে আওয়ামী লীগ ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধু। এর নেতৃত্ব যদি পাকিস্তানপন্থীদের হাতে চলে যায়, তা ভারতের জন্য বড় বিপর্যয় হবে।"
‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগের পেছনের গল্প
সম্প্রতি এনসিপি (জাতীয় নাগরিক দল)-এর নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড় হয়। তিনি দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জমান তাঁদের এক বৈঠকে বলেছেন, ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির’ কিছু নেতার নেতৃত্বে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠন করে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। সেই নেতাদের মধ্যে উল্লেখ করা হয় শিরিন শারমিন চৌধুরী, শেখ ফজলে নুর তাপস ও সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম। হাসনাতের মতে, এসব নেতা শেখ পরিবারকে অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ‘নতুন আওয়ামী লীগ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন।
আওয়ামী লীগের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, “এই চক্রান্তের খবর আমরা আগেই পেয়েছি। এর মাধ্যমে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণ করানো হচ্ছে বলে দেখানো হবে, যা আসলে এক ধরণের প্রতারণা।” তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালেও এ ধরনের একটি চক্রান্ত হয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। এবারও হবে না।
তার মতে, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের হৃদয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রতি অগাধ আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, “যেমন ভারতের রাজনীতিতে গান্ধী পরিবার, তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ পরিবার। তাদের ত্যাগ ও অবদান ভোলার নয়।”
দেশত্যাগ, হুমকি এবং কলকাতার প্রস্তুতি
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশ ছেড়েছেন—এমন খবরও ছড়িয়েছে। কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, বর্তমানে এই ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ পরিকল্পনাই সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে নিরাপত্তা ও নির্বাচনে সুযোগ দেওয়া হবে। না হলে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া কিছু নেতাও এই পরিকল্পনায় জড়িত।
তার অভিযোগ, “যাঁদের পরিচ্ছন্ন বলা হচ্ছে, তাদের অনেকেই আদতে ‘ক্লিন’ নন। এদের মধ্যে অনেকেরই চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।”
হাসিনার ভার্চুয়াল প্রত্যাবর্তন
চক্রান্ত মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী ভার্চুয়াল সভা করছে, যেখানে শেখ হাসিনা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন এবং নেতাকর্মীদের কথা শুনছেন। তিনি জানাচ্ছেন, “আমি দেশ ছাড়তে চাইনি, ইস্তফাও দিইনি। আমাকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি বেঁচে আছি, শীঘ্রই ফিরব এবং প্রতিটি নির্যাতনের বিচার করব।”
তিনি আরও জানান, ৬৪ জেলার মধ্যে ইতোমধ্যে ২৩টি জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজারের রিপোর্ট।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫