চাকরি হওয়ার ১০ মাস পর নিয়োগপত্র পেলেন রূপালি ব্যাংকে

প্রকাশকালঃ ১৮ জুন ২০২৩ ০৫:০৮ অপরাহ্ণ ১৬৮ বার পঠিত
চাকরি হওয়ার ১০ মাস পর নিয়োগপত্র পেলেন রূপালি ব্যাংকে

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত রূপালী ব্যাংকের চাকরিতে নিয়োগের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হচ্ছে সুপারিশ পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের। ১০ মাস পর নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন সিনিয়র অফিসার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। আগামী ৯ জুলাই চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়েছে তাঁদের।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র অফিসার পদে জনবল নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে ছয়টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কার্যক্রম শেষে প্রার্থীদের অনেক আগেই নিয়োগ দিলেও রূপালী ব্যাংকের সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ১০ মাস পর নিয়োগপত্র পেলেন।

দীর্ঘদিনেও নিয়োগপত্র না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়েছে। আবার অনেকে নবম গ্রেডের এই চাকরি পাওয়ার কারণে এর নিচের গ্রেডের অন্য চাকরি পেয়েও যোগদান করেননি। এ কারণে এই চাকরির আশায় বেকার থাকতে হয়েছে তাঁদের। সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের ভোগান্তি নিয়ে গত মার্চ ও মে মাসে প্রথম আলোতে ‘সিনিয়র অফিসারের নিয়োগ কার্যক্রম চার বছরেও শেষ হয়নি’ ও ‘চাকরির সুপারিশ পেয়েও নিয়োগপত্র পাননি ৮৯২ জন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।


সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া এক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরও নিয়োগপত্র পেতে ১০ মাস অপেক্ষা করতে হলো। অথচ এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আওতায় অন্যান্য ব্যাংকে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা অনেক আগেই যোগদান করে বেতন পাচ্ছেন। চাকরি পেয়েও ১০ মাস বেকার থাকতে হলো। নিয়োগপত্র হাতে না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। অবশেষে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ায় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হলাম।’

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র অফিসারের ৭৭১টি শূন্য পদ পূরণের জন্য ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের পদ ২৬৪টি, জনতা ব্যাংকের ১৩৯টি, রূপালী ব্যাংকের ২১১টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১১৩টি, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ৮টি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের ৩০টি ও কর্মসংস্থান ব্যাংকের ৬টি।


নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রিলিমিনারির তারিখ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে পরে তা স্থগিত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর প্রিলিমিনারি অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলির ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ নভেম্বর। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৯ নভেম্বর। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ২০ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় ২০২২ সালের ৩ আগস্ট।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর বাকি নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে নিজ নিজ ব্যাংকগুলো। চূড়ান্ত ফলের এক থেকে দুই মাসের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেয় সোনালী ও জনতা ব্যাংক। নিয়োগের পর তাঁদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন গত ডিসেম্বরে নিয়োগ দেয়, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও কর্মসংস্থান ব্যাংক নিয়োগ দেয় ফেব্রুয়ারিতে এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নিয়োগ দেয় মার্চে। রূপালী ব্যাংক ১০ মাস পর এ মাসে সুপারিশ পাওয়া ২১১ প্রার্থীর ঠিকানায় নিয়োগপত্র পাঠিয়েছে।


সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া কয়েক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ জন নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন। আগামী ৯ জুলাই যোগ দিতে বলা হয়েছে। যোগদানের দিন ডোপ টেস্ট ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। কাউকে জোনাল অফিসে ও কাউকে নির্দিষ্ট শাখায় যোগদান করতে বলা হয়েছে। নিয়োগপত্রে কার কোথায় পোস্টিং, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে। এক দিনেই সবাইকে যোগদান করতে হবে।

রূপালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত অন্য ব্যাংকগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে নিয়োগ দেয়। আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে নিয়োগপত্র দিয়ে থাকি। তাই নিয়োগপত্র পাঠাতে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সময় লেগেছে।’

আটকে থাকা অন্যান্য ব্যাচের নিয়োগপত্র কবে ছাড়া হবে, এ প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ৪০০ জনের নামে নিয়োগপত্র ছেড়ে দিয়েছি। ২০১৮ সালভিত্তিক ও এর আগের সব নিয়োগের নির্বাচিত প্রার্থীদের ঠিকানায় নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে। বাকি নিয়োগের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।’