|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৫৮ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:২৬ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চললেও সব সরকারি মাধ্যমিকে স্থবিরতা


কুড়িগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চললেও সব সরকারি মাধ্যমিকে স্থবিরতা


কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

সারা দেশের মতো কুড়িগ্রামেও সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা সাধারণভাবে চললেও গত দুই দিন ধরে সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষাগ্রহণ বন্ধ রেখেছেন সহকারী শিক্ষকরা। বিভিন্ন উপজেলা ও বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্যই মিলেছে।
 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন শিক্ষকরা

শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় আন্দোলনে সমর্থন জানালেও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ১ ডিসেম্বর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে চিলমারী ও রৌমারীর কয়েকটি স্কুলে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। রৌমারীর কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
 

রৌমারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে—সহকারী শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও পরীক্ষায় অংশ নেননি; তারা লাইব্রেরিতে অবস্থান করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল করিম প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যান।
 

ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম সদরের বেশ কয়েকটি স্কুলে অনুসন্ধানে জানা যায়—সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মবিরতির ছবি প্রচার হলেও বাস্তবে প্রায় সব স্কুলেই পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন শিক্ষকরা।
 

একাধিক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করার বিষয়টি শিক্ষকদের নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাদের মতে, "শিক্ষার্থীরা তো আমাদের ক্ষতি করেনি। তাদের ক্ষতির মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করা ঠিক নয়।" তাই শিক্ষকরা পরীক্ষার কাজে অংশ নিচ্ছেন।
 

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষা বন্ধ

অন্যদিকে, কুড়িগ্রামের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থগিত রয়েছে। ২৪ নভেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষায় চারটি বিষয়ের পরীক্ষা হলেও ১ ডিসেম্বর থেকে সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে গিয়ে সব পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছেন।
 

কুড়িগ্রাম সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে সোমবার ও মঙ্গলবার পরীক্ষা নির্ধারিত থাকলেও কোনও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য স্কুলে গিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছে।
 

এক সহকারী শিক্ষক বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বৈষম্যের শিকার। এই আন্দোলন শিক্ষাক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষাগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
 

জেলা শিক্ষা অফিস ও প্রশাসনের অবস্থান

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে—জেলায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সোমবার আটটিতে পরীক্ষা বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার নতুনভাবে সরকারি হওয়া পাঁচটি স্কুলে পরীক্ষা নেওয়া হলেও পুরোনো সরকারি পাঁচটি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়নি।
 

জেলা শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিয়মিত শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং পরীক্ষাগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। কিন্তু তারা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার কথা বলছেন।”
 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ জানান, “সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোর সভাপতির দায়িত্বে থেকে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে; নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
 

তিনি আরও বলেন, “সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে এভাবে আন্দোলনে যাওয়া বিধিসম্মত নয়। শিক্ষকরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে।”


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫