প্রকাশকালঃ
১৩ জুলাই ২০২৩ ০১:৫৪ অপরাহ্ণ ১৯৮ বার পঠিত
মানবজীবনে পাঁচটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো যৌবন, সুস্থতা, প্রাচুর্য, অবসর ও জীবন। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিলে ইহকাল ও পরকালে সাফল্য অর্জিত হবে। এদিকে ইঙ্গিত করে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি পাঁচ কাজকে পাঁচ কাজের আগে মূল্যায়ন কোরো।
যৌবনকে বার্ধক্যের আগে মূল্যায়ন করো। সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে মূল্যায়ন কোরো। প্রাচুর্যকে দরিদ্রতার আগে মূল্যায়ন করো। অবসরকে ব্যস্ততার আগে মূল্যায়ন করো এবং মৃত্যুর আগেই জীবনকে মূল্যায়ন করো। (বাইহাকি, হাদিস : ১০২৪৮)
নিম্নে পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
এক. যৌবনকাল : যৌবনকাল মানুষের জীবনের উন্নতির সময়। এ সময় সব কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। তাই যুগে যুগে ইসলামের ডাকে তরুণদের সাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তাই আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসী সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ছিল একদল তরুণ, যারা রবের প্রতি ঈমান এনেছে এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছি।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ১৩)
কিয়ামতের দিন সাত শ্রেণির লোক আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবেন। তাদের মধ্যে তরুণ রয়েছেন, যারা আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা সাত ধরনের ব্যক্তিকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (এর মধ্যে দ্বিতীয় স্তরে তিনি উল্লেখ করেন) এমন যুবক (ও যুবতী), যারা রবের ইবাদতে বেড়ে উঠেছে। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৩)
দুই. সুস্থতা : সুস্থতা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। অসুস্থ হওয়ার পর এর মূল্য অনুভব করা যায়। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ বিন মুহসিন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ স্থানে নিরাপদে রয়েছে, শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে এবং তার কাছে সেই দিনের পুরো খাবার রয়েছে, তার কাছে যেন পুরো দুনিয়ার সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৬)
অন্য হাদিসে সুস্থতার প্রতি অধিকাংশ মানুষের উদাসীনতার কথা বলা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দুটি নিয়ামত সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ প্রতারিত হয়। তা হলো সুস্থতা ও অবসর সময়। (অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ এসব সময়ে পার্থিব ও অপার্থিব উপকারী কাজে অতিবাহিত করে না।) (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)
তিন. প্রাচুর্য : স্বাভাবিক জীবন যাপনে ধনসম্পদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে মানুষ অভাবের কথা ভুলে যায়। এমনকি নিজের নৈতিকতাবোধও হারিয়ে ফেলে। তাই সব সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সম্পদ ব্যয় করে নিজেকে আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করা চাই। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ দান করলে ও মুত্তাকি হলে এবং উত্তম কাজকে সত্যায়ন করলে আমি তার জন্য সহজ পথকে সুগম করে দেব।’ (সুরা লায়ল, আয়াত : ৫-৭)
চার. অবসর : অনেকে অবসর সময়কে নিস্ক্রিয়ভাবে কাটায়। অথচ মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবসর যাপনকালেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যায়। পরকালে মুমিনরা দুনিয়াতে অবহেলায় কাটানো প্রতি মুহূর্তের জন্য দুঃখবোধ করবে। কারণ দুনিয়ার সামান্য আমলের প্রতিদান আখিরাতে অনেক বেশি হবে। তাই ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যখনই অবসর হবেন তখনই আপনি (ইবাদতে) নিমগ্ন হবেন। এবং আপনার রবের প্রতি মনোনিবেশ হোন।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৭-৮)
ইচ্ছার কারণে অবসরের সাধারণ কাজেও সওয়াব লেখা হয়। আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, মুয়াজ (রা.) বলেছেন, ‘আমি রাতে নামাজ পড়ি ও ঘুমাই। আমি আমার ঘুমের মধ্যেও এমন আশা করি, যা আমি আমার নামাজে করে থাকি।’ (অর্থাৎ আমার ঘুম থেকে ইবাদতের প্রস্তুতি উদ্দেশ্য থাকে। তাই ঘুমের জন্যও আমি প্রতিদান পাব বলে আশা করি।) (বুখারি, হাদিস : ৬৯২৩)
পাঁচ. জীবন : ইহকালের প্রতিটি মুহূর্ত মানুষের জন্য মূল্যবান। মৃত্যুর পর ইহকালের সব আমলের প্রতিদান দেখে মানুষ আফসোস করবে। কিন্তু তা কোনো কাজে আসবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ এবং অবিচল থাকে, মৃত্যুকালে তাদের কাছে ফেরেশতা অবতরণ করে বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কোরো, যার ব্যাপারে তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’ (সুরা হামিম সিজদা, আয়াত : ৩০)