বায়ুদূষণে শহরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে

প্রকাশকালঃ ২৩ মে ২০২৩ ০৩:০৬ অপরাহ্ণ ১১০ বার পঠিত
বায়ুদূষণে শহরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে

বায়ুদূষণের ফলে ধীরে ধীরে আমরা অসুস্থ জাতিতে পরিণত হচ্ছি। এই দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। বিভিন্ন শহর ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয় উঠছে। কিন্তু বায়ুদূষণ কমানোর জন্য সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

 বায়ুদূষণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধনের আয়োজন করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

 মানববন্ধনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা বায়ুদূষণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। বায়ুদূষণের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে উঠবে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। তাঁদের শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে বেড়ে উঠতে দিতে পারি না।’


ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে গাছ কাটার সমালোচনা করে ইকবাল হাবিব বলেন, গাছ লাগানোর পরিবর্তে ১৫-২০ বছরের পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প এলাকাভিত্তিক ‘মাস্তানদের’ লালন করার প্রকল্প বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা বলেন, ‘ঢাকা একদিকে যেমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত অন্যদিকে বায়ুদূষণের পরিমাণও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি, পরিবেশ অবক্ষয় ও নানাবিধ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আমাদের প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।’


মানববন্ধনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের দিক থেকে ২০২০ ও ২০১৯ সালে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ, আর বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানী শহরের মধ্যে দূষণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। আর ২০২২ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে অকাল মৃত্যুর ২০ শতাংশ বায়ুদূষণের কারণে হয়।

এমন অবস্থায় বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ১৪ দফা সুপারিশ করেছে ক্যাপস। মানববন্ধনে সুপারিশগুলো তুলে ধরেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। সুপারিশগুলোর মধ্যে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সেন্ড ব্লকের ব্যবহার বৃদ্ধি; ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা, নির্মাণকাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখা, রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো অন্যতম।


মানববন্ধনে আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের পরিবেশদূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিভিন্ন শহর ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয় উঠছে। সারা দেশে প্রবহমান তীব্র দাবদাহের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী। তিনি বলেন, তাপমাত্রার বৃদ্ধি কমাতে বায়ুদূষণ কমানো জরুরি। অথচ দেশে বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। অতি দ্রুত বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে জনজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তিনি বায়ুদূষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য বনায়ন ও জলাভূমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

মানববন্ধনে বায়ুদূষণ রোধে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ছাড়াও দূষণের ভয়াবহতা বোঝাতে শ্বাস নিতে প্রতীকী অক্সিজেন মাস্ক পরে মানববন্ধনে দাঁড়ান আয়োজকেরা। মানববন্ধনের সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল সেভ ফিউচার বাংলাদেশ, গ্রীন ভয়েস, পরিবেশ উদ্যোগ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসসহ নয়টি সংগঠন।

মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির, পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা পারভীন, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।