হাদিসের বর্ণনায় খুনির তাওবা ও মৃত্যু

প্রকাশকালঃ ২২ মে ২০২৩ ০৬:১১ অপরাহ্ণ ৪৭৪ বার পঠিত
হাদিসের বর্ণনায় খুনির তাওবা ও মৃত্যু

নি ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করল। অতঃপর তাকে একজন খ্রিস্টান পাদরির কথা বলা হলে সে তার কাছে এসে বলল যে সে ৯৯ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এ অবস্থায় তার জন্য তাওবার কোনো সুযোগ আছে কি? পাদরি বলল, নেই। ফলে লোকটি পাদরিকেও হত্যা করল।

এভাবে তাকে হত্যা করে সে এক শ সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঃপর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করায় তাকে একজন আলেমের কথা বলা হলো। সে তাঁর কাছে গিয়ে বলল যে সে এক শ জনকে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তাওবার কোনো সুযোগ আছে কি? আলেম বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তার ও তার তাওবার মাঝে কিসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল? তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও।

সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সঙ্গে ইবাদত করো। আর তোমার দেশে ফিরে যাবে না। কেননা ওটা খারাপ জায়গা।


লোকটি নির্দেশিত জায়গার দিকে চলতে থাকল। অর্ধেক পথ অতিক্রম করলে তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমতের ও আজাবের ফেরেশতামণ্ডলীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতা বলল, এ লোকটি নিখাদ তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।

পক্ষান্তরে আজাবের ফেরেশতা বলল, লোকটি কখনো কোনো ভালো কাজ করেনি। এমন সময় অন্য এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের কাছে আগমন করলেন। তখন তারা তাকেই এ বিষয়ের সালিস নিযুক্ত করল। তিনি বলেন, ‘তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে দেখো। যে দিকটি নিকটবর্তী হবে, সে দিকেরই সে অন্তর্ভুক্ত হবে।’

আল্লাহ তাআলা সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পেছনে ফেলে আসা স্থানকে আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে যাত্রা করেছিল, তারা তাকে সেদিকের এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী পেল। ফলে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো এবং রহমতের ফেরেশতা তার জান কবজ করল [আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, বুখারি, হাদিস : ৩৪৭০, মুসলিম, হাদিস : ২৭৬৬)]


শিক্ষা

১. পাপী যদি পাহাড় পরিমাণও পাপ করে তবু সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে খালেস অন্তরে তাওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হইয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৫৩)

তিনি আরো বলেন, ‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা করো তিনি তা জানেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত ২৫)

২. মূর্খ ব্যক্তি কোনো সমস্যায় পড়লে কোরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে অভিজ্ঞ কোনো আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমস্যার সমাধান করে নেবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা না জান তাহলে সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণসহ জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৪৪)

৩. কোনো বিষয়ে যথাযথভাবে না জেনে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।