কৃষি বিপণনের ২৯ পণ্যের দর নির্ধারণ অর্থহীন ও অযৌক্তিক

সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে খুচরা পর্যায়ে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়াকে অবিবেচনা, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। একই সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকেই নির্ধারণ করে দেওয়া পণ্যগুলো বিক্রি করার দাবি জানিয়েছে দোকান মালিক সমিতি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন স্থগিত করাসহ সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
এ সময় মহাসচিব জহিরুল হক ভুঁইয়াসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলার কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। এখন ২৯ পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ দামে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে এসব পণ্য বিক্রির অনুরোধ জানাই। একই সঙ্গে পণ্যগুলোর বিক্রীত লাভ দিয়ে কর্মকর্তারা বেতন নেবেন। হয় তাদের বেঁধে দেওয়া দামে কৃষি বিপণনকে বিক্রি করতে হবে, না হলে এ প্রজ্ঞাপন স্থগিত করতে হবে। আমরা এ দামে বিক্রি করতে পারব না। দাম বেঁধে দেওয়াটা অযৌক্তিক, অবাস্তব ও অর্থহীন।’
লিখিত বক্তব্যে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে চরম অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা মূল্য বেড়েছে। অন্যদিকে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা আনুপাতিক হারে কমছে। এই দীর্ঘ দুর্যোগময় সময়ে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেণির অনেকেই পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত। যাঁরা টিকে আছেন, তাঁরাও অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পণ্যমূল্য বেঁধে দেওয়া অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এ ধরনের কল্পনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে সরকার ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রন্ত হবে।’
মালিক সমিতির সভাপতি আরো বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও টিসিবির মূল্যতালিকা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে ভয়াবহ পণ্য সংকট তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন জেলা থেকে জানানো হয়েছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করার সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র শ্রেণির ব্যবসায়ীরা আবারও ব্যবসা পরিচালনা করতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন।’
গত শুক্রবার উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মাছ, মাংস, ডাল ও সবজির মতো ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা উৎপাদন খরচ হিসাব করে তার ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণ করেছে। প্রতিটি পর্যায়ে নির্ধারিত হারে মুনাফা ধরা হয়েছে। আইনটির বিধিমালায় কোন পণ্যে কোন পর্যায়ে কত মুনাফা করা যাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করা, টিসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংস্থার চাপমুক্ত অবস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে আরোপিত সব ধরনের কর ও ভ্যাট কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার সুযোগ নেই, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হবে। বাজার ঠিক করতে গেলে বিপণন অধিদপ্তর নিজেই বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারে। সেই সুযোগ তাদের আছে। কিন্তু কারো সঙ্গে আলোচনা না করে এভাবে দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে বাজারে পণ্যের সংকট হচ্ছে; অভিযান হচ্ছে খুচরা দোকানে। উৎপাদক ও পাইকারি পর্যায়ে তদারকি না বাড়িয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫