|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:২৬ অপরাহ্ণ

সীমান্তে আগুনের কুণ্ডলী: রোহিঙ্গাদের দাবি, আরাকান আর্মি পোড়াচ্ছে তাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘর


সীমান্তে আগুনের কুণ্ডলী: রোহিঙ্গাদের দাবি, আরাকান আর্মি পোড়াচ্ছে তাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘর


মঈনুদ্দীন শাহীন (ষ্টাফ রিপোর্টার) কক্সবাজার:-


 

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার আলোচনা চলার মাঝেই কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপসহ সীমান্তসংলগ্ন তিনটি এলাকায় এই দৃশ্য দেখা যায়।
 

রোহিঙ্গাদের দাবি, রাখাইনে তাদের পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘরগুলো আরাকান আর্মি পুড়িয়ে ফেলছে। তাদের মতে, সম্প্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হওয়ায় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, যাতে রোহিঙ্গারা বুঝতে পারে যে, সেখানকার পরিস্থিতি এখনও অনুকূল নয়।
 

সীমান্তে আগুনের ধোঁয়া দেখা সম্পর্কে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, "বিজিবি সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।"
 

সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে নাফ নদীর ওপারে রাখাইনে মংডুর পেরাংপ্রু এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এর আগে সোমবারও এই এলাকাগুলোতে আগুনের ধোঁয়া দেখা গিয়েছিল।
 

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সালা উদ্দিন জানান, "সকালে নাফ নদীর ওপারে রাখাইনে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। স্থানীয়রা জেটিঘাটে ভিড় করে দেখছিল। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরুর পর থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটি আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য আরাকান আর্মির কাজ।"
 

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা আবদুল কাদের জানান, "ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে, তবে ঠিক ওপারে কী হচ্ছে তা বলা কঠিন। তবে এমন ঘটনা ঘটায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।"
 

এদিকে, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তবে, দীর্ঘ ৮ বছরে একটি রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। বরং, গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।
 

একটি সরকারি সূত্র জানায়, "প্রত্যাবাসনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই নাফ নদীর ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য আগুন দেওয়া হচ্ছে।"
 

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের জানান, "রাখাইনে থাকা আমাদের স্বজনরা জানাচ্ছেন, এখনও সেখানে নির্যাতন চলছে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে বাধা দিচ্ছে, এবং তাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘর পুড়িয়ে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে।"
 

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, "রাখাইনে নতুন করে আরাকান আর্মি জ্বালিয়ে-পোড়াচ্ছে, যার ফলে সীমান্তে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। তবে, সীমান্তে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।"
 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানান, "সীমান্তে নতুন করে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখা গেছে, তবে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।"


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫