|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ০২:২১ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৯ আগu ২০২৩ ০২:২৭ অপরাহ্ণ

সাত উপদেশ লোকমান (আ.)-এর কোরআনে


সাত উপদেশ লোকমান (আ.)-এর কোরআনে


লোকমান (আ.) নবী ছিলেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে ইবনে কাসির (রহ.)সহ বেশির ভাগ গবেষকের দাবি—তিনি সরাসরি নবী ছিলেন না, বরং আল্লাহ তাআলার নৈকট্যপ্রাপ্ত একজন বিশেষ ওলি ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি লোকমানকে দান করেছি প্রজ্ঞা। (সুরা লোকমান, আয়াত : ১২)

আল্লাহপ্রদত্ত এই প্রজ্ঞা ও  জ্ঞানগর্ভ বাণী লোকমান (আ.) সমাজের মানুষকে শোনাতেন এবং নিজ সন্তানদের উপদেশ দিতেন। সেই জ্ঞানগর্ভ বাণীতে যেমন আল্লাহর হকের কথা আছে, তেমনি বান্দার হকের কথাও উল্লেখ হয়েছে। তাঁর কিছু উপদেশ এখানে উল্লেখ করা হলো—

প্রথম উপদেশ : সর্বপ্রথম তিনি সন্তানকে রবের হক সম্পর্কে সচেতন করে বলেন। তিনি বলেন, ‘হে প্রিয় বৎস, তুমি (কখনো) আল্লাহর সঙ্গে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক ভয়াবহ জুলুম।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৩)


কেননা, অক্ষম সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে আসীন করার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। সব অপরাধ ক্ষমাযোগ্য হলেও শিরক একটি অক্ষমাযোগ্য অপরাধ। এ জন্য মুশরিকদের ঠিকানা চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

দ্বিতীয় উপদেশ : পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘প্রিয় বৎস, যদি কোনো কিছু সরিষার দানা পরিমাণও হয় তা  পাথরের ভেতরে থাকুক কিংবা আসমানে বা জমিনে থাকুক; নিশ্চয়ই আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৬) এখানে তিনি গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বত্রে খোদাভীতির উপদেশ দিয়েছেন। 

তৃতীয় উপদেশ : ‘প্রিয় পুত্র, নামাজ প্রতিষ্ঠা করো।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৭) ঈমানের পর মুমিনের সর্বপ্রথম কর্তব্য নামাজ আদায় করা। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে।


চতুর্থতম উপদেশ : ‘প্রিয় পুত্র, সৎ কাজের আদেশ করো এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করো।’ (সুরা লুকমান আয়াত : ১৭) একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের বিকল্প নেই। এটিই ছিল সব নবীর প্রধান দায়িত্ব। এটি ইসলামের অন্যতম একটি সৌন্দর্য।

পঞ্চম উপদেশ : ‘প্রিয় বৎস, তোমার ওপর যে বিপদাপদ পতিত হবে তাতে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই তা বড় হিম্মতের কাজ।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৭) এখানে তিনি যেকোনো বিপদে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিয়েছেন।

ষষ্ঠ উপদেশ : ‘প্রিয় বৎস, অহংকারবশত মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং পৃথিবীতে দম্ভ করে চলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। চলাফেরার মধ্যে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখো। নিশ্চয়ই সবচেয়ে অপছন্দনীয় আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৮-১৯)


এতে তিনি অহংকার বর্জন ও বিনয়ের উপদেশ দিয়েছেন। এবং অহংকারীদের মতো উঁচু গলায় কথা না বলার উপদেশ দিয়েছেন। কেননা, অহংকার মানুষের মর্যাদা বাড়ায় না; বরং তা আরো কমিয়ে দেয়।

সপ্তম উপদেশ : রবের হক সম্পর্কে লুকমান (আ.)-এর প্রথম উপদেশের পর এর সঙ্গে আল্লাহ তাআলা আরো একটি উপদেশ যুক্ত করেছেন। তা হলো পিতা-মাতার হক। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার ব্যাপারে জোর নির্দেশ দিয়েছি—তুমি আমার প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (কেননা) মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৪)

এতে ইঙ্গিত আছে, রবের হকের পরই মা-বাবার হকের স্থান। কেননা মা-বাবা তাকে কষ্ট করে লালন-পালন করেছেন। বিশেষভাবে মায়ের কষ্টের কথা বলা হয়েছে। মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছেন, প্রসব বেদনা সহ্য করেছেন এবং তাকে দুধ পান করিয়েছেন, লালন-পালন করিয়েছেন। তাই তাঁদের সঙ্গে সর্বোচ্চ সৎ ব্যবহার করতে হবে এবং তাঁদের সেবাযত্ন করতে হবে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫