ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
স্বেচ্ছাচারীতা ও সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রাম সদরের কিশালয় মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার মোছা. জীবুন্নাহার খানমের বিরুদ্ধে। ওই বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক গত ১৫ জুলাই জীবুন্নাহারের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানা বিষয়ে শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কারো কোনো মতামত নেন না জীবুন্নাহার।
তিনি মনগড়া সবকিছু করেন। তিন-চারদিন পর স্কুলের এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া স্কুলে এলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে যান তিনি। জেলা শিক্ষা অফিসে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দেওয়ার পর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১৫ দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া বিদ্যালয়ের কম্পিউটারসহ নানা জিনিসপত্র জীবুন্নাহারের যোগসাজসে চুরি হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
জেলা শিক্ষা অফিসে দেওয়া অভিযোগপত্রে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, শিক্ষক জীবুন্নাহারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন- ‘আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। আমার বিষয়গুলো ডিজি, ডিডি, ডিপিও ও জেলা প্রশাসক জানেন। আপনাদের আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবুন্নাহার খানম ‘বাংলাদেশের ৫০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ও ভাষা ল্যাব স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ৫ সেট কম্পিউটারসহ সরঞ্জামাদি গ্রহণ করেন। যার আনুমানিক মূল্য ছিল ২ লাখ টাকা। সেই মালামাল দীর্ঘ সাত মাস জীবুন্নাহারের বাসায় ছিল। পরে গত জুলাই মাসে এসব মালামাল বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন তিনি। আর সেখান থেকেই সরঞ্জমাদিগুলো গত ১৯ আগস্ট চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় জীবুন্নাহার বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, সরকারি প্রকল্পের চুরি হওয়া জিনিসগুলো যে কম্পিউটার ছিল, সে বিষয়ে তারা জানতেন না। চুরির ঘটনায় জীবুন্নাহার জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন তারা।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘প্রকল্পের মালামালগুলো ম্যাডামের বাড়িতে ছিল। যখন বিদ্যালয়ে আনা হয়, আমি দেখেছিলাম। তবে বক্সের ভেতরে কম্পিউটার ছিল নাকি অন্য কিছু তা জানতাম না।’
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকেও নেই। আমার নিজেদের মতো করে প্রতিষ্ঠান চালাই।’
স্বেচ্ছাচারিতা ও সহকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’ তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেতে চান বলে জানান।
এ ছাড়া কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জমাদি চুরির বিষয়ে জীবুন্নাহার খানম বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। পরে চুরির ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা করেছি। মালামালগুলো প্রথমে আমার বাসায় ছিল। পরে সেগুলো বিদ্যালয়ে এনে রেখেছি।’ তিনি দাবি করেন শিক্ষকদের উপস্থিতিতে এসব মালামাল বিদ্যালয়ে রেখেছেন।
জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার সমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ আমি এ জেলায় নতুন এসেছি। অভিযোগের বিষয়ে আমি জেনেছি। এ ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’