টানা তৃতীয় দিনের মতো ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গোলাগুলি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫১ অপরাহ্ণ   |   ৮৬ বার পঠিত
টানা তৃতীয় দিনের মতো ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গোলাগুলি

অনলাইন ডেস্ক:-


 

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। টানা তৃতীয় দিনের মতো সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
 

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভয়াবহ ওই হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দুই দেশের সেনারা প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলিতে লিপ্ত হচ্ছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তানি সেনারা নিয়মিতভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। শনিবার রাতেও পাকিস্তান থেকে ছোট অস্ত্র দিয়ে উসকানিমূলক গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার জবাবে ভারতীয় সেনারা হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে পাল্টা জবাব দেয়।
 

পেহেলগামে মঙ্গলবারের বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এরপরই ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে আটারি স্থলসীমান্ত বন্ধ এবং ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত, ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ, দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত এবং ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। দুই দেশই সার্ক ভিসা বাতিল করে এবং বিদেশি নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এ প্রেক্ষিতে গত দুই দিনে ২৭২ জন পাকিস্তানি আটারি সীমান্ত দিয়ে ভারত ছেড়েছেন এবং আরও অনেকে রোববার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে ফিরে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান থেকে পাঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে ৬২৯ জন ভারতীয় নাগরিক ও কূটনীতিক ফিরে এসেছেন।
 

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, ১০০টি বিদেশি দূতাবাস থেকে কূটনীতিকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ের জন্য আবেদন করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও প্রকাশ্য ভাষণে মোদি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তির অঙ্গীকার করেছেন এবং কাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু হয়েছে।
 

এদিকে, বিনা পূর্বঘোষণায় ভারত আজাদ কাশ্মীরের প্রধান নদী ঝিলামের পানি ছেড়ে দিয়েছে। মুজাফ্ফরাবাদের বিভাগীয় প্রশাসন নদীপারের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মসজিদ থেকে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে, ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, ঝিলাম নদী সিন্ধু নদীর একটি উপনদী।
 

রয়টার্স জানিয়েছে, সিন্ধু নদীর পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিতে পাকিস্তানের কৃষকদের মধ্যে ভয় দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষক হোমলা ঠাকুর বলেন, ‘পানি বন্ধ হলে পুরো এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে, আমরা না খেয়ে মরব।’ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত অবিলম্বে পানি বন্ধ করার সক্ষমতা রাখে না।
 

এ সংকট নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। শনিবার সন্ধ্যায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে শাহবাজ শরিফ ইরানের সহায়তার ইচ্ছাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন।
 

দ্য হিন্দু সূত্রে জানা গেছে, পেহেলগামে হামলার তদন্তে রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের অংশগ্রহণ চায় পাকিস্তান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক সাক্ষাৎকারে জানান, এই সংকটে রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিধর দেশগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি হামলার তদন্তে আন্তর্জাতিক টিম গঠনের আহ্বান জানান।