ঈশ্বরদীতে ৮ কুকুরছানা হত্যা: মামলা দায়ের, অভিযুক্ত নারী গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিনিধি-পাবনা
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকায় আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে শহরের পিয়ারপুর মহল্লার একটি ভাড়া বাসা থেকে অভিযুক্ত নারী নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিশি রহমান ঈশ্বরদী উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী।
তার আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ এর ৭ ধারায় মামলা করেন। তিনি জানান, মামলায় নিশি রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আ.স.ম. আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার এবং ‘পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার’-এর চেয়ারম্যান মো. রাকিবুল হক অমিতসহ প্রায় অর্ধশত মানুষের উপস্থিতিতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অকলিমা খাতুন আরও বলেন, ঘটনাটি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হওয়ায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার এবং প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাকে মামলা করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রাণীকল্যাণকর্মীরাও গত দুদিন ধরে অভিযুক্তের শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক নয়নকে গেজেটেড সরকারি কোয়ার্টার ছাড়তে ও কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে তারা সরকারি বাসা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। মামলার পর মূল আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে।
জানা যায়, সদ্য বদলি হওয়া ঈশ্বরদীর ইউএনও সুবির কুমার দাশের পোষা কুকুরটিই ছিল ওই মা কুকুর। তিনি বর্তমানে ঝিনাইদহে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত। মুঠোফোনে তিনি বলেন, “আমি বদলি হয়ে গেলেও আমার কুকুরগুলোর দেখাশোনার ব্যবস্থা ঈশ্বরদীতেই ছিল। ছানাগুলোকে হত্যার খবর শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। গ্রেপ্তারের খবর কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
অভিযুক্ত নিশি আকতার অবশ্য দাবি করেন, “ছানাগুলো আমাদের সিঁড়ির পাশে থাকত এবং খুব বিরক্ত করত। তাই আমি ব্যাগে ভরে পুকুরপাড়ে একটি গাছের পাশে রেখে এসেছি। নিজে পুকুরে ফেলিনি। কীভাবে পানি পড়ে মারা গেছে জানি না।”
গত সোমবার সকালে মৃত ৮ কুকুরছানার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শহরজুড়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হলে সমালোচনা আরও বাড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিবাদে যুক্ত হন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সেদিন সকালে তিনি নয়ন স্যারের কাছে ছানাগুলোর কথা জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। পরে নয়নের ছেলে জানায়, “আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।” এরপর পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখে উদ্ধার করা হলে বস্তা খুলে আটটি ছানাই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫