|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০৯ মে ২০২৫ ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২১ আগu ২০২৩ ০৪:১৬ অপরাহ্ণ

পাশ্চাত্যের বাইরেও কূটনৈতিকভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করছে অনেক দেশ


পাশ্চাত্যের বাইরেও কূটনৈতিকভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করছে অনেক দেশ


রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর বৈশ্বিক অঙ্গনে পশ্চিমা প্রভাবের প্রশ্ন সামনে এসেছে। যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বিশ্লেষক মনে করেছিলেন যে, পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরের খুব কম দেশই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবে। বাস্তবে সামরিক সহায়তা না   দিলেও এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশই কূটনৈতিকভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করছে।

মনে হয় পশ্চিমা প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসেছে বাকি বিশ্ব। ইউক্রেনের বিষয়ে তারা পশ্চিমকে অনুসরণ না করে স্বাধীনভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। ঝুঁকেছে রাশিয়া ও চীনের দিকে। কিন্তু বাকি বিশ্বের কাছে পশ্চিমাদের গুরুত্ব কেন আগের মতো থাকছে না, সেটি অনেকে অনুধাবন করছে না। ইউক্রেন যুদ্ধ হয় তো বিষয়টি পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ যদি না হতো, তাহলে কি বিষয়টি সামনে আসত না?


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা ব্লকের বাইরের দেশগুলো পুরোপুরি নীরব ছিল না। কিয়েভের প্রতি অনেক দেশের সমর্থন ছিল। মার্চে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে সবশেষ ভোট হয়। এতে ১৯৩ টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেয় ১৪১টি দেশ। ৫২টি দেশ মস্কোর পক্ষে অথবা ভোটদানে বিরত থাকে। এর আগে গত বছর অক্টোবরে ইউক্রেনের দখল করা ভূখণ্ডগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রতিবাদে গৃহীত নিন্দা-প্রস্তাবটিও প্রায় অনুরূপসংখ্যক ভোটে পাশ হয়েছিল। চীন, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা যে কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে রাশিয়ার সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন। এই সফরকালে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘রুশ শক্তি খর্ব করাই ন্যাটোর ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠানোর উদ্দেশ্য’। স্পষ্টতই তার এ কথা ল্যাভরভকে বিব্রত করে। এর আগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা ডি সিলভা জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজকে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিব্রত করে বলেছিলেন, ‘শান্তি-প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার দায় ইউক্রেন ও ন্যাটোকে যৌথভাবে বহন করা উচিত।’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কূটনৈতিকরা বাকি বিশ্বকে বারবার তাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য উদ্বুদ্ধ করলেও তাতে যে কাজ হচ্ছে সেটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

বাহ্যত ইউক্রেন যুদ্ধ শীতলযুদ্ধ যুগের মতো পশ্চিমের বাইরের দেশগুলোকে যূথবদ্ধ হচ্ছে। তবে এটি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মতো আলাদা কোনো জোট হয়ে উঠার মতো অবস্থা তৈরি করেনি। পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব তৈরি হওয়াই জোট গঠনের একমাত্র ইস্যু নয়, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। অপশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে নানা ইস্যুতে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। অনেক দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন করছে, রাশিয়ার ভূখণ্ড দখলের নিন্দা করেছে কিন্তু সমম্বিত আকারে করেনি। পশ্চিমাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির ঝুঁকি নিয়েই অনেক দেশ আবার রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে অথবা ভোটদানে বিরত থেকেছে। গত নভেম্বরে বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর জি-২০ মন্ত্রীপর্যায়ে বৈঠকে চীনের আপত্তির মুখে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।


পশ্চিমা ব্লকের বাইরের দেশগুলো শুধু নয়, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বছর জানায় রাশিয়ার সঙ্গে রাতারাতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে কোনো বিকল্প পথ বের করা যায়নি। এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, এমন অনেক দেশের কাছ থেকেও ইউক্রেন সহযোগিতা পেয়েছে। তুরস্ক রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, কিন্তু ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছে। একই কথা খাটে সৌদি আরবের বেলায়ও। দেশটি ইউক্রেনকে সহযোগিতা করা ছাড়াও বন্দি বিনিময়ে মধ্যস্থতা করেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের আগে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত হয় বিশ্ব। ঐ সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে ভ্যাকসিন প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দেওয়ার বদলে ভ্যাকসিন মজুত করার দিকেই মনোযোগী হতে দেখা গেছে। এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মূল্যবোধের পরিপন্থী। পশ্চিমা দেশগুলো এই মনোভাব অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে হতাশ করে। পশ্চিমা ও অপশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার এই বিষয়টিও ভূমিকা পালন করে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উন্নত পশ্চিমা দেশগুলো প্রধানত দায়ী হলেও এর ফল ভোগ করছে অনুন্নত ও দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলো। এ নিয়ে জাতিসংঘ বছর বছর শীর্ষ সম্মেলন করে গেলেও উল্লেখযোগ্য কোনো ফল এখনো দৃশ্যমান নয়।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫