যে নারী ছিলেন উমাইয়া বংশের খ্যাতিমান মুহাদ্দিস

প্রকাশকালঃ ০৭ জুন ২০২৩ ১২:২৫ অপরাহ্ণ ১৭৬ বার পঠিত
যে নারী ছিলেন উমাইয়া বংশের খ্যাতিমান মুহাদ্দিস

তিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) ছিলেন সময়ের খ্যাতিমান নারী মুহাদ্দিস ও উমাইয়া বংশের গর্ব। হাদিস গবেষকরা তাঁকে ‘তৃতীয় স্তরের মুহাদ্দিস বা হাদিস বর্ণনাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ছিলেন মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান (রা.)-এর নাতি, খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের স্ত্রী এবং খলিফা ইয়াজিদ বিন আবদুল মালিকের মা। এ ছাড়া আত্মীয়তার সূত্রে উমাইয়া বংশের ১২ জন খলিফার মারহাম ছিলেন তিনি। ফলে তাদের সঙ্গে তাঁর পর্দা করতে হতো না।

আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) একজন নারী মুহাদ্দিস হিসেবেই ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে আছেন। বিখ্যাত আইনজ্ঞ ও হাদিস বিশারদ আবু জুরআ (রহ.) বলেন, ‘শামের যেসব নারী হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে আতিকা বিনতে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া (রা.) অন্যতম। তাঁর থেকে আমর ইবন মুহাজির আল-আনসারি (রহ.)-এর মতো মুহাদ্দিসও হাদিস বর্ণনা করেছেন। আলেমরা তাঁকে তৃতীয় স্তরের (মুহাদ্দিস) বলে গণ্য করেন।’

প্রখর মেধা, উচ্চতর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জন্য খলিফা আবদুল মালিক আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.)-কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি সব সময় তাঁকে পাশে রাখতেন, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন, চরম শত্রুর ব্যাপারেও তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করতেন। খলিফা প্রিয়তমা স্ত্রীর বিচ্ছেদ, দুঃখ ও কষ্ট কখনো সহ্য করতে পারতেন না।


বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় তাঁকে দাদা মুয়াবিয়া (রা.)-এর সঙ্গে তুলনা করা হতো। আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) ছিলেন পুণ্যবতী ও দানশীল নারী। পরিবার-পরিজনের জন্য নিঃসংকোচে ব্যয় করতেন। পিতা ও দাদার সূত্র তিনি যত সম্পদ লাভ করেছিলেন সব পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে দান ও ওয়াকফ করে দেন। যদিও স্বামী সন্তানদের প্রত্যাশা ছিল তিনি তাঁর সম্পদ দুই ছেলে ইয়াজিদ ও মারওয়ান দিয়ে যাবেন।

তিনি তাঁকে এই অনুরোধও করেছিলেন। দুই ছেলে ছাড়াও উম্মে কুলসুম নামে তাঁর একটি মেয়ে ছিল। আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দামেস্কে ‘বাবে জাবিয়া’-এর বাইরের একটি অঞ্চলকে ‘আরদু আতিকা’ বলা হয়। এখানে তাঁর একটি প্রাসাদ ছিল এবং এ প্রাসাদেই তাঁর স্বামী খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান ইন্তেকাল করেন। তিনি নিজেও দামেস্কে ইন্তেকাল করেন এবং বাবে জাবিয়ার বাইরে তাঁর প্রাসাদের কাছে দাফন করা হয়। এখনো দামেস্কে তাঁর সমাধি সৌধ রয়েছে। মূলত নাতি ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদের মৃত্যুতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং অসুস্থ হয়ে যান। ১২৬ হিজরি মোতাবেক ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। নাতির মৃত্যুতে তাঁর ভেঙে পড়ার কারণ হলো, এক হজের সফরে তাঁর সামনেই ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদকে হত্যা করা হয়। খলিফা আবদুল মালিক সে বছর তাঁকে হজ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু পবিত্র কাবা ও নবীজি (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের আকাঙ্ক্ষা তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি।

সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আতিকা (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিখ্যাত সাহাবি জুবায়ের ইবনুল আউয়াম (রা.)-এর ছেলে ও আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর ভাই মুসআব ইবনে জুবায়ের (রহ.)-কে শহীদ করার পর তাঁর মাথা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান প্রথমে কুফাতে এবং এরপর মিসরে পাঠান। অতঃপর তা দামেস্কে পাঠানো হয়। মুসআব (রহ.)-এর খণ্ডিত মস্তক দামেস্কে পৌঁছানোর পর আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) তা নিয়ে গোসল করান এবং মর্যাদার সঙ্গে দাফন করেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তোমরা যা করছ তাতে তোমরা খুব খুশি! যে মাথাটি শহরে শহরে ঘুরাচ্ছ। এটা খোদাদ্রোহিতা ছাড়া কিছুই না। ঐতিহাসিকরা বলেন, মুসআব ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোর অনুরোধও করেছিলেন আতিকা (রহ.)।

আল্লাহ এই মহীয়সী নারীর কবরকে শীতল করুন। আমিন