চীনের সর্ববৃহৎ মসজিদ

প্রকাশকালঃ ০৯ আগu ২০২৩ ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ ২৩৪ বার পঠিত
চীনের সর্ববৃহৎ মসজিদ

চীনের সর্ববৃহৎ মসজিদ মসজিদে ঈদগাহ। স্থানীয় উচ্চারণ ‘ইদ কাহ’। ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত মসজিদ কাশগর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। মসজিদের মোট আয়তন ১৬ হাজার আট শ বর্গমিটার।

মসজিদের মূল প্রার্থনা কক্ষে একসঙ্গে দুই থেকে তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আর পুরো মসজিদ কমপ্লেক্সের ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার। মসজিদ নির্মাণে মৌলিক ধর্মীয় উপাদানের সঙ্গে স্থানীয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটেছে। ঈদগাহ মসজিদকে মনে করা হয় প্রাচীন উইঘুর স্থাপত্যের চমৎকার নিদর্শন ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।

এ মসজিদ দ্বারা উইঘুরে ইসলামী সংস্কৃতি ও স্থাপত্যরীতির প্রভাব অনুভব করা যায়। ‘দ্য চায়না ডিসকভারি ওয়েবসাইট’-এর ভাষ্য মতে, মসজিদটি প্রকৃতপক্ষে আরব সেনাপতি ও ইসলাম প্রচারক ইবনে কুতাইবার সমাধি ছিল (সম্ভবত উমাইয়া সেনাপতি কুতাইবা বিন মুসলিম উদ্দেশ্য। যিনি অত্র অঞ্চল বিজয়ে নেতৃত্ব দেন এবং খোরাসানের প্রশাসক নিযুক্ত হন)। কাশগর রাজ্যের শাসক সাকসিজ মির্জা ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন।


প্রাচীনকালে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রচারে ঈদগাহ মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খ্রিস্টীয় ১৬ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ঈদগাহ মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়। তখন বিপুলসংখ্যক মুসল্লি জুমার জামাতে অংশগ্রহণ করত। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে গুলেরেনা নামের একজন মুসলিম নারী পাকিস্তান যাওয়ার পথে মারা যান। স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদ সম্প্রসারণে তার পরিত্যক্ত সম্পদ ব্যবহার করে।

এ ছাড়া একজন ধনাঢ্য উইঘুর মুসলিম নারী ছয় শ একর ভূমি মসজিদকে দান করেন। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। তখন একটি গেট এবং ভেতরে খাল খনন করা হয়। মসজিদের সর্বশেষ সংস্কার হয় দাওগুয়াং সাম্রাজ্যের সময়ে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সংস্কার কার্যক্রম শেষ হয়।


ঈদগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সটি সাতটি অংশে বিভক্ত। তা হলো গেট, মিনার, সাধনা কক্ষ, সভাকক্ষ, উঠান, অতিরিক্ত প্রার্থনা কক্ষ ও মূল প্রার্থনা কক্ষ। মসজিদ নির্মাণে জমকালো শৈলীর পরিবর্তে উজ্জ্বল রং ও সাধারণ শৈলী ব্যবহার করা হয়। মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে অবস্থিত। তবে পশ্চিমেও একটি প্রবেশপথ আছে। মুসল্লিদের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণ সূর্যাস্ত দেখতে এবং অবসর কাটাতে ঈদগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে আসে। উজ্জ্বল হলুদ রঙের গেটের দুই পাশে রয়েছে দুটি মিনার। মসজিদের অভ্যন্তর ভাগের নকশায় মুসলিম রীতি অনুসারে ফুল-পাতা-লতার ব্যবহার দেখা যায়।

ধনুকাকৃতির দরজাগুলোর ৪.৭ মিটার উঁচু এবং ৪.৩ মিটার চওড়া। মিনার দুটির উচ্চতা প্রায় ১৮ মিটার। উভয়টিতে ইসলামী কারুকাজ ও ফুলেল নকশা রয়েছে। মিনারের শীর্ষদেশে আছে অর্ধচন্দ্র। ১৬ মিটার উঁচু গম্বুজের নিচে রয়েছে অষ্টভুজ আকৃতির হল। উত্তর পাশের পাথর বাঁধানো পথ ধরে হাঁটলে পাওয়া যাবে ২০ একরের সুবিশাল উঠান। যেখানে রয়েছে সবুজ বাগান, দৃষ্টিনন্দন গাছ ও পরিষ্কার পানির পুকুর।

উইঘুর মুসলমানের কাছে ঈদগাহ মসজিদ যেমন তাদের সোনালি অতীতের সাক্ষী ও প্রতীক, তেমনি তা বহু নির্মমতারও সাক্ষী। যেমন ৯ আগস্ট ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে উইঘুর নেতা তৈমুর বেগকে শহীদ করে তাঁর মাথা ঈদগাহ মসজিদে প্রদর্শন করা হয়েছিল। একইভাবে ১৯৩৪ সালে মার্চে উইঘুর আমির আবদুল্লাহ বুগরাকে শহীদ করে তাঁর মাথা ঈদগাহ মসজিদে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে ঈদগাহ মসজিদে একাধিকবার নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।