মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার চেয়ে পাঁচ শতাধিক প্রাণী বেশি

প্রকাশকালঃ ০২ জুন ২০২৪ ০১:৫২ অপরাহ্ণ ৭২২ বার পঠিত
মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার চেয়ে পাঁচ শতাধিক প্রাণী বেশি

রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার চেয়ে ১০ প্রজাতির পাঁচ শতাধিক প্রাণী বেশি রয়েছে। ফলে এসব প্রাণী রাখার স্থান এবং তদারকিতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জলহস্তী, ঘোড়া, সাপ, গাধাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি। অতিরিক্ত এসব প্রাণী সরিয়ে নেওয়ার উপায় খুঁজছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, বর্তমানে সেখানে ১৩৫ প্রজাতির প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রাণী আছে। এর মধ্যে কিছু প্রজাতির প্রাণী ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি।

 

বাড়তি এসব প্রাণীর দেখভাল করাসহ তত্ত্বাবধানে কর্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হচ্ছে। সময়ে সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে অতিরিক্ত এসব প্রাণী অন্য চিড়িয়াখানার সঙ্গে অদলবদল করা হয়। আর হরিণ, ময়ূরসহ কিছু প্রাণী বিক্রি করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো পাখি অবমুক্ত করা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রাণী সরিয়ে নিতে প্রায় দেড় মাস আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হলেও এখনো পাওয়া যায়নি।

 

ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রয়েছে যেসব প্রাণী

জাতীয় চিড়িয়াখানায় যেসব প্রাণী বেশি রয়েছে তার মধ্যে ২০টি অজগর সাপ রাখার ব্যবস্থা থাকলেও আছে ৩১টি। আটটি গাধা রাখার ব্যবস্থা থাকলেও আছে ১৩টি। অ্যারাবিয়ান ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা আছে ছয়টির, বিপরীতে রয়েছে ১১টি। দুটি দেশি ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা থাকলেও রয়েছে তিনটি। জলহস্তী রাখার ব্যবস্থা আছে সাতটির, কিন্তু রয়েছে ১১টি। দেশি কবুতর রাখার ধারণক্ষমতা ৮০টির হলেও অতিরিক্ত আছে ৪৭টি।

 

চিড়িয়াখানায় জালালি কবুতর রাখার ব্যবস্থা আছে ১০০টির, বেশি আছে ৪৯টি, আর ইমু পাখি রাখার ব্যবস্থা ১৮টির হলেও বেশি আছে আটটি। কানি বক রাখা যায় ২০০টি, বেশি আছে ১৭৫টি। ৩০০টি ওয়াক পাখি রাখার সক্ষমতা থাকলেও বেশি রয়েছে ২০৩টি। চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বাড়তি যে প্রাণীগুলো আছে, সেগুলোর কিছু বিক্রি করা হবে, বাকিগুলো অন্য চিড়িয়াখানা বা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’ এর জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের কাছে যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মূল্য নির্ধারণ করে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি, বনে অবমুক্ত করা, দেশি-বিদেশি চিড়িয়াখানায় প্রাণী বিনিময় কিংবা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা।

 

এর আগে করোনাকালে প্রাণীর প্রজননক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় চিত্রা হরিণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। বাড়তি ওই হরিণ কমাতে ২০২১ সালের মার্চ থেকে হরিণ বিক্রি শুরু করে কর্তৃপক্ষ। ময়ূরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেগুলোও বিক্রি শুরু করে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে প্রতিটি চিত্রা হরিণ ৫০ হাজার টাকা এবং ময়ূর ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এখন আবার অতিরিক্ত যেসব প্রাণী বিক্রি করবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ, সেগুলো কিনতে ক্রেতার বন বিভাগের লাইসেন্স থাকতে হবে।

 

যে কারণে কমাতে হচ্ছে অতিরিক্ত প্রাণী

কর্তৃপক্ষ বলছে, ধারণক্ষমতার সঙ্গে মিলিয়ে প্রাণী না রাখলে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষণ খরচের বিষয়টিও আছে। অন্যদিকে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত ঝামেলা কমিয়ে আনা যায়। চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলছেন, ‘প্রায় দেড় মাস আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়েছি। অনুুমোদন পেলে অতিরিক্ত এই প্রাণীর বিষয়ে ব্যবস্থা নেব আমরা।

 

অনুমোদনের পর অজগর সাপ হয়তো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কারণ এর গ্রাহক পাওয়া যায় না। আর গাধা, ঘোড়া, ইমু পাখি বিক্রি করা হবে। জলহস্তী বিনিময়ের মাধ্যমে বিভিন্ন পার্কে দেওয়া যেতে পারে। কানি বক ও ওয়াক পাখি প্রকৃতিতে উন্মুক্ত করা হবে। সবই করা হবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে।’