বিদ্যুৎ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল, কর্তৃপক্ষ বলছে সরবরাহ অর্ধেক 

প্রকাশকালঃ ৩১ আগu ২০২৪ ১১:৫৬ অপরাহ্ণ ৫৬৫ বার পঠিত
বিদ্যুৎ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল, কর্তৃপক্ষ বলছে সরবরাহ অর্ধেক 

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

 

তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

 

লোডশেডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালি কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন অনেক এলাকায় রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গ্রাহকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন।

 

এদিকে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনাবৃষ্টিতে আমন ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে সেচব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের বেশির ভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমন চাষে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন।

 

বিদ্যুতের ‘ভেলকিবাজি’তে অতিষ্ঠ গ্রাহকদের মধ্যে সামর্থ্যবানরা ঝুঁকছেন তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ তথা আইপিএসের দিকে। তবে রুটিন মেনে চলা লোডশেডিংয়ে আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া নিয়ে ট্রল শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেউ পোস্ট করছেন ‘মামা গেলো’ কিংবা ‘আটকে রাখা গেলো না, আবার চলে গেলো’ লিখে।

 

মিজানুর রহমান নামে এক শিক্ষক শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাতে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত পঞ্চমবারের মতো বাবাজি (বিদ্যুৎ) চলে গেলেন!’

 

কুড়িগ্রাম শহরের ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায় কারেন্ট যায়। মাঝে মাঝে টানা দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং চলে। দোকানে কাজ করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে।’

 

স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে প্রতিঘণ্টায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

 

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ ৫ ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে সব প্ল্যান্টের জ্বালানি সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

 

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রামের টগরাইহাট গ্রিডে জেলার ৫টি উপজেলার (সদর, উলিপুর, চিলমারী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী) জন্য মোট চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এ ছাড়াও ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে স্ক্যাডা অপারেশনের মাধ্যমে সরবরাহ বন্ধ করলে লোডশেডিংয়ের সময় আরও প্রলম্বিত হচ্ছে।

 

নেসকো, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক, কখনও অর্ধেকেরও কম। ফলে লোডশেডিং চলছে। সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’

 

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘কুড়িগ্রামে আমাদের প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ লোডশেডিং চলছে।’ পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।