প্রকাশকালঃ
০৯ জুলাই ২০২৪ ০৪:০৯ অপরাহ্ণ ৩১০ বার পঠিত
মহররম শব্দের অর্থ পবিত্র বা সম্মানিত। হিজরি বর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস মহররম। রজব, জিলকদ ও জিলহজ ছাড়াও এই মাসকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (লাওহে মাহফুজে) মাসগুলোর সংখ্যা হলো ১২। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৬)
সম্মানিত এই মাসগুলোয় যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ রয়েছে। এ কারণে আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী, স্থানীয়রা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি বিশ্রামে সময় অতিবাহিত করত। অন্যদিকে, মহররম মাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হলো আশুরা। আরবি ‘আশারা’ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। আশারা অর্থ দশ, আর আশুরা অর্থ দশম। দিনটি ঐতিহাসিক নানা ঘটনাবলিরও সাক্ষ্য বহন করে। আশুরার দিনে আদি পিতা আদম (আ.) কে সৃষ্টি ছাড়াও তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়।
এই দিনেই হযরত নূহ (আ.) এর নৌযানের যাত্রা শুরু হয় ও মহাপ্লাবন শেষে ঈমানদারদের নিয়ে তিনি নৌকা থেকে নামেন। আবার আশুরার দিনেই কারবালার বিয়োগান্তরের মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা হয়। ফজিলতপূর্ণ এই মাসে নফল রোজা রাখার বিশেষ সওয়াব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আশুরার দিন ছাড়াও একদিন আগে বা পরে মিলিয়ে দুটি নফল রোজা রাখার বিধান রয়েছে। খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আশুরার রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
হাদিসে এসেছে, ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার দিনের সাওমের উপরে অন্য দিনের সাওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমজান মাস (এর ওপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখি নাই)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৮০)
আবার রমজানের পর মহররম মাসের রোজা যে সর্বোত্তম সে বিষয়েও বিভিন্ন হাদিস এসেছে। আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একবার রাসুল (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, ফরজ নামাজসমূহের পর কোন সালাত এবং রমজানের রোজার পর কোন রোজা সর্বোত্তম? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ফরজ সালাতসমূহের পর গভীর রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) সর্বোত্তম এবং রমজানের রোজার পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা সর্বোত্তম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬২৭)
তবে মনে রাখতে হবে, আশুরার রোজা একটি নয়, দুটি। কেউ কেউ শুধু আশুরার দিনে রোজা রাখেন, যা উচিত নয়। দুটি রোজার মধ্যে একটি আশুরার দিন অর্থাৎ, ১০ মহররম। আর অন্যটি এর একদিন আগে অথবা পরে রাখা যাবে (৯ বা ১১ মহররম)।
এ ক্ষেত্রে আশুরার রোজা রাখার বিশেষ ফজিলতও রয়েছে। আবূ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর কাছে সাওম (রোজা) নিয়ে প্রশ্নের একপর্যায়ে নবীজি বলেন, আশুরার সাওম (রোজা) সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম, ২৬১৭)
ফজিলতপূর্ণ মাস হওয়ায় আলেমগণ মহররম মাসে বেশি বেশি নফল রোজা পালনের তাগিদ দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি সম্মানিত এই মাসে ফরজ আদায়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি যত্নবান হওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন আলেমগণ। সেই সঙ্গে অন্যান্য যে ফরজ বিধানগুলো রয়েছে সেগুলোতেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কারও যদি ফজরের নামাজের ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকে, তবে বিশেষ এই মাসের সম্মানে ফজরের নামাজ আদায়ের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত।
একইভাবে অন্যান্য যে ফরজ কাজ রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। আবার এ মাসের সম্মানে সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের কথাও বলে থাকেন আলেমগণ। সেই সঙ্গে তারা মহররম মাসে বেশি বেশি তওবা করার বিষয়েও তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া ফজিলতপূর্ণ এই মাসে কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা, দরুদ পাঠ ইত্যাদি বেশি বেশি করা উচিত।