ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আবারও বাসে ডাকাতি, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২১ মে ২০২৫ ০৪:৪৮ অপরাহ্ণ   |   ৯৩ বার পঠিত
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আবারও বাসে ডাকাতি, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:-


 

ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে আবারও ভয়াবহ বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল বাসটি লুটপাট শেষে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাইপাস এলাকায় শিবপুরে ফেলে রেখে যায়। এসময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী।
 

ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বুধবার ভোর ৫টার মধ্যে। যাত্রীদের দাবি, ডাকাতরা তাদের সব কিছু লুটে নেয়—নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী।
 

বাস যাত্রা ও ডাকাতির কৌশল
জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে রংপুরগামী আল ইমরান পরিবহনের একটি বাস যাত্রা শুরু করে। পথে সাভারের নরসিংহপুর, বাইপাইল ও আশুলিয়া থেকে যাত্রী ওঠে। বাসটিতে মোট ৪৫ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯ জন নারী।

 

রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পেরিয়ে যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্তে চরভাবলা এলাকায় পৌঁছালে, যাত্রীবেশে থাকা ৮–১০ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্রের মুখে চালকের কাছ থেকে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা চালক ও যাত্রীদের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে এবং বাসটি ঘুরিয়ে ঢাকার দিকে নিয়ে যায়।
 

লুটপাট ও ভয়াবহ রাত
বাসের সহকারী আতিকুর রহমান জানান, ডাকাতরা যাত্রীদের একাধিকবার তল্লাশি করে নগদ অর্থ, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার লুট করে। গাজীপুরের চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলের মধ্যে রাতভর বাসটি কয়েকবার আসা-যাওয়া করে। যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা লুট করা হয়।

 

নারী যাত্রীদের ওপর নির্যাতন
বাসযাত্রী মিনু মিয়া জানান, ডাকাতির পুরো সময়টিতে বাসটি একাধিকবার চন্দ্রা-আশুলিয়া ও টাঙ্গাইল রুটে চলাফেরা করে। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসটি টাঙ্গাইল শহরের বাইপাস সড়কের শিবপুরে ফেলে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। পরে যাত্রীরা টাঙ্গাইল সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।

 

বগুড়ার শিবগঞ্জের যাত্রী রফিক জানান, নারী যাত্রীদের তল্লাশির সময় তাদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। যদিও তাঁর চোখ-মুখ বাঁধা ছিল, তবুও তিনি নারীদের কান্না ও কাকুতি-মিনতি শুনতে পান।
 

অন্য এক নারী যাত্রী সুমাইয়া বলেন, "ডাকাতরা আমাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে কয়েকবার তল্লাশি করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়েছে। তারা খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছে, তবে সফল হয়নি।"
 

পুলিশের পদক্ষেপ
খবর পেয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান এবং বাসের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।

 

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমদ বলেন, “ডাকাতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। মিনু মিয়া নামে এক যাত্রী, যিনি রংপুরের পিরগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহপুর এলাকার বাসিন্দা, তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।”
 

পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একই মহাসড়কে ইউনিক রয়েলস পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এর এক সপ্তাহের মধ্যে মধুপুরে আনন্দ ভ্রমণের একটি বাসেও ডাকাতি হয়।