এশিয়ার শেয়ারবাজারের পতন

প্রকাশকালঃ ২২ আগu ২০২৩ ১২:৩১ অপরাহ্ণ ২০২ বার পঠিত
এশিয়ার শেয়ারবাজারের পতন

চীনের অর্থনীতিকে টেনে তুলতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে দেশটির বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবারও নীতি সুদহার হ্রাস করেছে—যদিও বাজার যতটা প্রত্যাশা করেছিল, ততটা নয়।

এই খবরে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। ফলে আজ সোমবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারের পতন হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না এক বছর মেয়াদি ঋণের জন্য নীতি সুদহার ১০ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়েছে, যদিও বাজারের প্রত্যাশা ছিল যে নীতি সুদহার অন্তত ১৫ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানো হবে।


বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন, চীনের অর্থনীতি চাঙা করতে অতীতের মতো এবারও বড় ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হবে। কিন্তু বেইজিং এই মুহূর্তে ঋণের লাগাম অতটা ছাড়তে চায় না।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতি নানা কারণে গতি হারিয়েছে—আবাসন খাতের নতুন ঋণসংকট, ভোক্তা ব্যয় ও ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া। এসব কারণে বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা ছিল, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার লাগাম আরও কিছুটা ছাড়বে। কিন্তু সেটা শেষমেষ হয়নি।

এদিকে ডলারের বিপরীতে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দরপতন হচ্ছে। এতে রপ্তানিকারকদের সুবিধা হলেও বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্ডের সুদহারের সঙ্গে চীনের সুদহারের পার্থক্য বেশি হলে বিনিয়োগকারীরা ডলারেই বিনিয়োগ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন। এ ছাড়া অর্থ পাচারও বেড়ে যেতে পারে।


আজ সকালে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এমএসসিআই সূচকের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ, গত সপ্তাহেও এই সূচকের পতন হয়েছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে এই সূচক। এ ছাড়া ইউরো স্টকস ৫০ ফিউচার ও এফটিএসই ফিউচার্স সূচক প্রায় অনড় অবস্থায় আছে। তবে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার ও নাসডাক ফিউচার্সের যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১ ও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ উত্থান হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা অবশ্য মনে করছেন, এশিয়ার শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা অতি উৎসাহ দেখিয়েছেন, বিশেষ করে, প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর বিষয়ে। সে কারণে তাঁদের শঙ্কা, যেকোনো সময় বড় ধরনের মূল্য সংশোধন হতে পারে।


এক জরিপেও দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে বিনিয়োগকারীদের হতাশার মাত্রা কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয়ে তাঁরা অতটা আশা হারাননি। ফলে তাঁরা বিনিয়োগ করতে পিছপা হচ্ছেন না, তাঁদের হিসাবে নগদ জমার পরিমাণ এখন দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন মনে করছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি গতি হারালেও মন্দার কবলে পড়বে না।

গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখনো ইকুইটিতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারেন। এক নোটে তাঁরা বলেছেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁরা আবারও নিজেদের শেয়ার বাইব্যাক করা বা কিনে নেওয়ার সুযোগ পাবেন এবং তখন শেয়ারের চাহিদা বাড়বে।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার গত সপ্তাহে বেড়ে ৪ দশমিক ৩২৮ শতাংশে উঠেছে। এর ওপর যদি তা আরও ওঠে, তাহলে তা হবে ২০০৭ সালের পর সর্বোচ্চ। এতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আকর্ষণ হারাবেন বিনিয়োগকারীরা।


গত জুলাইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার আবার বেড়েছে। ফলে চলতি বছর ফেডারেল রিজার্ভ আরও অন্তত একবার নীতি সুদহার বাড়াতে পারে, এমন সম্ভাবনা আছে। তাতেও শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়তে পারে।

অন্যদিকে জুলাইয়ে চীনের আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই কমেছে। সেই সঙ্গে আবারও আবাসন খাতে সংকট শুরু হয়েছে। বেশ কিছু আবাসন কোম্পানি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটি বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও কাজ হচ্ছে না।

শেয়ারবাজার চাঙা হচ্ছে না, বিনিয়োগকারীরা আসছেন না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনীতি চাঙা না হলে কেউ শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না।