প্রকাশকালঃ
০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ ৩৭৪ বার পঠিত
ফেব্রুয়ারিতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৭৮ শতাংশ। এর আগে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল গত আগস্টে, ৯.৫২ শতাংশ।
দেশে নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যের দাম বেড়েছে। বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে চাপ বাড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর। সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যই বলছে, মার্চে গড় মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে।
অবশ্য মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশে উন্নীত না হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। এ সময় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে যায়নি। ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি যাতে ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে না যায়, সে জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনাও চেয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক–পরবর্তী সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ফেব্রুয়ারিতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে।
অর্থাৎ একজন ভোক্তা গত বছরের মার্চে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেত, এ বছরের মার্চে একই পণ্য কিনতে তার খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৩৩ পয়সা। চলতি বছরের শুরু থেকে পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫৭ ভাগ।
পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, মার্চে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে খাদ্যপণ্যের ওপর। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছে। আগের মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ; মার্চে তা কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে।
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের প্রভাব নিয়ে গত ২৯ মার্চ একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। তাতে দেখানো হয়, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর করা এই জরিপে যেসব পরিবার অংশ নিয়েছে, তাদের ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়ে গেছে।
এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে, মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার, ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি।
মার্চের মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, গত ছয় মাসে মানুষের ব্যয় যতটা বেড়েছে, আয় ততটা বাড়েনি। মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক চাপে পড়ে মানুষ খাবারে কাটছাঁট করেছে। আমিষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। সার্বিকভাবে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ।
মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি দেশীয় বাজারব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীরা অকারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। যারা পণ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে যুক্ত, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তভাবে মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিবিএসের হিসাবে, গত বছর আগস্টে মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হয়েছিল। ওই মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড হয় মার্চে; ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। রমজানের আগে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি, আসন্ন ঈদুল ফিতরের কারণে এপ্রিলে এই হার আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, এ বছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতির যে প্রাক্কলন করেছে, মার্চে সেই প্রাক্কলন ছাড়িয়ে গেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, পুরো অর্থবছরের গড় করলে মূল্যস্ফীতির হিসাব কমে আসবে।
তিনি বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। কারণ, সৌদি আরব ও রাশিয়া তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম, মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে। সেই ধারাবাহিকতায় মার্চে তা বেড়েছে। তবে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন যে এটি ১০ শতাংশ হয়নি।’
বিবিএসের তথ্য বলছে, মার্চে খাদ্য খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। এ সময় মাছ, মাংস, সবজি, মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে বিবিএস দাবি করেছে, এ সময়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মধ্যে বাড়িভাড়া, আসবাব, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষাতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়েনি। উল্টো কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৮২ ভাগ, মার্চে তা কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ হয়েছে।