আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ থেকে সহিংসতার আশঙ্কা

প্রকাশকালঃ ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৩:১৮ অপরাহ্ণ ২৯২ বার পঠিত
আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ থেকে সহিংসতার আশঙ্কা

গামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ থেকে সহিংসতার আশঙ্কা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য সহিংসতা মোকাবেলা করে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দলীয়ভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছে তারা। ঢাকা ও আশপাশের জেলা, মহানগরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগআওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একজন সদস্য বলেন, সহিংসতার ক্ষেত্রে প্রথম প্রতিক্রিয়া বা প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যদি এ ধরনের যেকোনো চেষ্টা শুরুতেই প্রতিহত করতে পারি তাহলে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। আর সে কৌশল বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, কোথাও সহিংসতার চেষ্টা হলে তাৎক্ষণিকভাবে যেন প্রতিহত করা যায় তেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আশঙ্কা অনুযায়ী, ভোরবেলায় বিএনপি নেতাকর্মীরা যেন রাজপথ দখল করে নিতে না পারে সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।


আর ঢাকার আশপাশের জেলা, উপজেলাগুলোয় ২৬ অক্টোবর থেকে দরজদারি রাখা হবে। এই নেতারা মনে করেন, অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই ঘটনা বড় হয়ে যায়। সে জন্য কোথাও জ্বালাও-পোড়াও বা ভাঙচুরের চেষ্টা দেখামাত্র প্রথমেই যেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিহত করতে পারেন সেভাবে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল তেজগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীন শাখা কমিটি ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।


এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ। বৈঠকে বিএনপির কর্মসূচি মোকাবেলায় কৌশলগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দু-এক দিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকার আশপাশের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা করবেন। সেখানে ২৮ অক্টোবর রাজপথের কর্মসূচি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। এর আগে ২৬ অক্টোবর নিজেদের প্রস্তুতির বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে বৈঠক করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় বাইরের লোকজন এসে মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে তা হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, মাঠে থেকে এসব প্রতিহত করতে। ২৮ অক্টোবর ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মী রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশ নেবে বলেও জানান তিনি।


অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ
গত শনিবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চার নেতার এ বৈঠকে ২৮ অক্টোবরের প্রস্তুতির বিষয়ে নানা কৌশল ঠিক করা হয়।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে ২৬ অক্টোবর থেকেই ঢাকার পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়। দলের নেতাকর্মীরা খেয়াল রাখবেন কোনো বাসায় অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখা যায় কি না। এমন কাউকে পেলে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি বাইরের লোকজন ঢাকায় এনে সন্ত্রাস করতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আমাদের নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় অপরিচিত লোকদের দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। ঢাকাবাসীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কিছু আমরা হতে দেব না।’


ভোরবেলায় রাজপথ দখলের শঙ্কায় বিশেষ প্রস্তুতি
বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে খুব ভোরে রাজপথ দখল করতে পারেন—এমন শঙ্কা মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে খুব ভোরে অবস্থান নেবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেও এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ওরা যদি ভোরে রাজপথে নামে আমারও ভোরেই নামব। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে। ঢাকার মানুষকে নিরাপদ রাখতে যা যা করণীয় সব প্রস্তুতিই আমরা রাখব।’

রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার উত্তরার আবদুল্লাপুর। এ এলাকার সংসদ সদস্য হাবীব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছি। উত্তরায় বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের সহিংতার চেষ্টা করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা প্রতিহত করব।’


বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ১০ লাখ লোক জমায়েতের প্রস্তুতি
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এর আয়োজক। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও লোক জড়ো করা হবে।

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘সমাবেশে ১০ লাখ লোক উপস্থিত থাকবে। বিএনপি-জামায়াত যে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে তার প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশে দলমত নির্বিশেষে মানুষ যোগ দেবে।’

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সমাবেশস্থল বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট হলেও পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নেবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।


ঢাকার আশপাশের জেলায়ও বড় প্রস্তুতি
ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৬ অক্টোবর থেকেই জেলাগুলোতে সতর্ক পাহারায় থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সারা দেশ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেন এসব জেলায় এসে অবস্থান নিতে না পারেন সেদিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ২৬ অক্টোবর থেকেই রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকব। ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশে ৫০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যোগ দেব। সমাবেশের প্রস্তুতি সফল করতে এরই মধ্যে আমরা উপজেলাগুলোতে বর্ধিত সভা করেছি। ২৬ অক্টোবর গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হবে।’


গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগও বড় প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা ২৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বৈঠক করে শান্তি সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য বড় প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি।’

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সমাবেশে যোগ দেব। তবে কত লোক নিয়ে যাব বা কর্মীদের জন্য কী নির্দেশনা থাকবে তা এখনো ঠিক হয়নি।’

মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ দুই শ বাসে ১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবে। সংগঠনের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, দুই-তিন দিনের মধ্যে সমন্বয় সভা করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া হবে।