কালের বিস্ময় তাজমহল। এটি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য। ইন্দো ইসলামিক স্থাপত্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম স্থাপত্য এটি। তাজমহলের নির্মাণশৈলী এতটাই নিখুঁত ও সৌন্দর্যময় যা বিশ্বের সব স্থাপত্যকেই এর থেকে আলাদা করেছে।
ভালোবাসার প্রতীক হলো এই তাজমহল। সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিরক্ষার্থে এটি নির্মাণ করেছিলেন।
সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি তাজমহল হলো একটি মৌসোলিয়াম বা দরগা। সম্রাট তার স্ত্রী মমতাজকে সমাধিস্থ করেন এই মহলেই। এমনকি মৃত্যুর পর সম্রাট শাহজাহানকেও তার স্ত্রীর পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
মুঘল সাম্রাজ্য শৈলীর নকশা সমগ্র ভবনটিতে আছেভ। যা সমাধিক্ষেত্রটিকে বেষ্টন করে আছে। শতকের পর শতক ধরে, ভালোবাসার এই স্মৃতিস্তম্ভ আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
তাজমহল নিয়ে নানা পৌরানিক কাহিনির প্রচলন আছে। এই বিশ্ববিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য আছে, যা হয়তো আজও আপনার অজানা। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক-
> তাজমহলের নির্মাণকাজ ১৬৩২ সালে শুরু হয়েছিল। আর শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। মোট ২২ বছর ধরে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
> ভারতীয়, ফরাসি ও ইসলামিক শৈলীর স্থাপত্যের সংমিশ্রণে নির্মাণ করা হয় তাজমহল।
> তাজমহলের স্থপতির নাম আহমেদ লাহৌরি।
> জানলে অবাক হবেন, তাজমহলে নির্মাণকাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। টানা ২২ বছর ধরে তারা সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে নির্মাণ করেন এই স্মৃতিস্তম্ভ।
> তাজমহল নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ৩২০ মিলিয়ন রুপি।
> তাজমহলে ব্যবহৃত মার্বেল পাথর রাজস্থান, তিব্বত, আফগানিস্তান ও চিন থেকে আনা হয়েছিল।
> দিনের বিভিন্ন সময় তাজমহলকে ভিন্ন রঙে দেখা যায়। অনেকের ধারণা, এই পরিবর্তিত রংগুলো নারীর পরিবর্তনশীল মেজাজকে চিত্রিত করে।
> তাজমহল বিশ্বের সেরা বিস্ময়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত।
> অনেকেই বলেন, তাজমহল নির্মাণের পর শাহজাহান সব শ্রমিকের হাত কেটে ফেলেন যাতে এই ধরনের স্থাপনা আর তৈরি না হয়। তবে এটি মোটেও সত্য নয়।
> তাজমহল প্রাঙ্গনে একটি মসজিদ আছে। তাজমহল শুক্রবারে বন্ধ থাকলেও নামাজ পড়তে যাওয়া ব্যক্তিদের তাজমহলের ভেতরে অনুমতি দেওয়া হয়।
> ১৯ শতকের শেষের দিকে তাজমহল ব্রিটিশ সৈন্যদের দ্বারা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। স্মৃতিস্তম্ভের দেয়াল থেকে মূল্যবান পাথর বের করা হয়েছিল।
১৯ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন স্মৃতিস্তম্ভটি পুনরুদ্ধারের আদেশ দেন। তাজমহলের অভ্যন্তরীণ কক্ষে ঝুলানো একটি বড় বাতিও উপহার দেন।
> ২০০০ সালে একজন ভারতীয় লেখক পি.এন. ওক দাবি করেন, তাজমহল আসলে একটি শিবমন্দির ছিল। প্রমাণের জন্য তাজমহলের বিভিন্ন স্থান খনন করার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। তার আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
> ২০০১ সালে ইউনেস্কো তাজমহলে ২ মিলিয়নেরও বেশি দর্শকের নথিভুক্ত করেছে।
> রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাজমহলকে ‘কালের গালে অশ্রুবিন্দু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।