দেশে মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই―সরকারের এমন দাবিতে বিপদে চালকল মালিকরা

প্রকাশকালঃ ১৬ জুলাই ২০২৪ ০৩:৩১ অপরাহ্ণ ৬৯৯ বার পঠিত
দেশে মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই―সরকারের এমন দাবিতে বিপদে চালকল মালিকরা

দেশে মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই―সরকারের এমন দাবিতে বিপদে পড়েছেন চালকল মালিকরা। তারা বলছেন, মিনিকেট ধান থেকে যে চাল উৎপাদন করেন, তাহেলে সে সবের নাম কী হবে? বস্তায় কোন জাতের নাম লিখবেন, এ নিয়ে সুরাহা করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে আবেদনও করেছেন কুষ্টিয়ার চালকল মালিকরা।

 

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমিত পরিমাণে হলেও মিনিকেট জাতের অস্তিত্ব আছে। তবে বাজারে যে পরিমাণ মিনকেট চাল বিক্রি হয়, তার সিকিভাগও উৎপাদন হয় না। এদিকে প্রতারণা রোধে ও বিতর্ক নিরসনে এ ব্যাপারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

 

সাদা ধবধবে সরু চাল ভোক্তার কাছে মিনিকেট নামেই পরিচিত। ব্যাপক জনপ্রিয় এই জাতটি উৎপাদন হচ্ছে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে। তবে সরকারের দাবি, দেশে মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত নেই। এমন বিতর্কের মধ্যেই সম্প্রতি চালের বস্তার গায়ে ধানের জাতের নাম লিখতে আদেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

 

এ পরিস্থিতিতে চালকল মালিকরা প্রশ্ন তুলেছেন, মিনিকেট নামে জাত না থাকলে বস্তার গায়ে কী লিখবেন? তারা বলছেন, মিল থেকে মিনিকেট নামেই বিক্রি করা হচ্ছে চালটি। আমরাও এ নামেই পাচ্ছি। এ জন্য আমরাও ক্রেতাদের কাছে মিনিকেট বলেই বিক্রি করছি।

 

বিষয়টি সমাধান করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে একটি আবেদন করা হয়েছে বলে জানান চালকল মালিক সমিতির নেতারা। তারা বলেন, এ ধানের বাস্তবতা রয়েছে। বুরো মৌসুমে জরিপ করলে ৬০ শতাংশ ধান আমরা মাঠে পাব। আর এ নাম আমরা দেইনি, চাষিরাই দিয়েছে।

 

এদিকে, জাতটি মিনিকেট হিসেবেই মিলারদের কাছে বিক্রি করেন বলে জানান কৃষকরা। তারা বলছেন, ভারত থেকে যখন ধানটি আনা হয়, তখন তারাই এর নাম দিয়েছে মিনিকেট। মিনিকেট ধান এই অঞ্চলে আবাদ হয় অতি অল্প পরিমাণে। অন্যান্য চিকন চালকে মিনিকেট নামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলেও জানান কৃষি বিশেষজ্ঞরা। আর এই বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে দাবি কৃষি বিপণন কর্মকর্তার।

 

কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. হায়াৎ মাহমুদ বলেন, ভারতেও মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত নেই। তবে এর থেকে ভালো ভালো ধানের জাত রয়েছে। সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খান বলেন, জাতভিত্তিক চালের নাম নির্ধারণ এবং চালের দাম সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে।

 

এদিকে কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন বিতর্কটির শিগগির অবসান প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বস্তায় ধানের জাতের নাম উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি এর মূল্যও উল্লেখ করতে হবে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি হবে না।

 

চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার আশ্বাস, শিগগিরই এই বিতর্ক নিরসন হবে। তিনি বলেন, বীজ প্রত্যয়ন কর্তৃক বোর্ড থেকে ধানের যে জাত সরবরাহ করা হয়ে থাকে, সেই নামটি তাদের কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেয়া হবে। ট্রান্সপারেন্ট বৈয়ামে আমরা ধানের জাত সংরক্ষণ করব, যেটি আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেও সংরক্ষিত হবে।