অতিবৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে নিউইয়র্ক শহরের বিভিন্ন এলাকা

প্রকাশকালঃ ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:০২ অপরাহ্ণ ২২৪ বার পঠিত
অতিবৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে নিউইয়র্ক শহরের বিভিন্ন এলাকা

ক্তিশালী ঝড়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টি এবং সেখান থেকে সৃষ্টি হওয়া আকস্মিক বন্যার কারণে নিউইয়র্ক শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। শহরের কয়েকটি সাবওয়ে সিস্টেম, রাস্তা ও হাইওয়েতে পানি উঠে গেছে। অতিরিক্ত পানির কারণে শুক্রবার লা গার্ডিয়ান বিমানবন্দরের অন্তত একটি টার্মিনাল বন্ধ করে দেয়া হয়।

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার শহরের কিছু কিছু অংশে ৮ ইঞ্চি/২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি পড়েছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর শুক্রবার নিউইয়র্ক শহরসহ কয়েকটি এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স’এ – যেটি আগে টুইটার হিসেবে পরিচিত ছিল – নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল পোস্ট করেন - “এই ঝড় ভয়াবহ, জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় নিউইয়র্ক, লং আইল্যান্ড ও হাডসন ভ্যালিতে জরুরি অবস্থা জারি করছি।”


এসব এলাকার মানুষের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন ‘পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় কখনোই যাতায়াত না করা’র জন্য। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো মৃত্যু অথবা বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। হাডসন নদীর তীরে অবস্থিত নিউ জার্সির হোবোকেন শহরেও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

জরুরি অবস্থা জারি করার নিউইয়র্ক শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস শহরের মানুষকে সতর্ক থাকারা পরামর্শ দিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলনে, “পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কিছু সাবওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের ভেতর যাতায়াত করা হঠাৎ করে খুবই কঠিন হয়ে গেছে।”

নাগরিকরা যেন ‘অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন’ করে চলে সেদিকে জোর দিয়েছেন তিনি। নিউইয়র্ক শহররে যাতায়াত সেবা প্রদানকারী সংস্থা মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন এজেন্সি জানিয়েছে পানি উঠে যাওয়ায় কয়েকটি সাবওয়ে লাইনে চলাচল পুরোপুরি বাতিল করে দেয়া হয়। অনেক স্টেশনও বন্ধ করে দেয়া হয়।


শহরের উত্তরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঐ অঞ্চলে উদ্ধার কর্মীরা বাতাস দিয়ে ফুলানো নৌকা ব্যবহার করে অনেক মানুষকে উদ্ধার করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স।

ঘটনাস্থলের ছবি আর ভিডিওতে দেখা যায়, তুমুল বর্ষণের মধ্যে হাঁটু পানিতে হাঁটছে মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করা অনেক ভিডিওতে দেখা যায় যে সাবওয়ে স্টেশনের দেয়াল ও ছাদ থেকে পানি চুঁয়ে পড়ছে।

এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা রোহিত আগারওয়াল জানান যে শহরের পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঘণ্টায় ১.৭৫ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টি সামাল দিতে পারে না।


ব্রুকলিন নেভি ইয়ার্ড থেকে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, শুক্রবার এক ঘণ্টায়ই ২.৫ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তিনি মন্তব্য করেন, “ব্রুকলিনের কিছু অংশ যে এই বৃষ্টিতে ভুগবে, তা স্বাভাবিক।” ব্রুকলিনের সাউথ উইলিয়ামসবার্গ অঞ্চলেও হাঁটু পানিতে ড্রেন পরিষ্কার করার ভিডিও দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

গোয়োনুস এলাকার কেলি হেইস বিবিসিকে বলেন যে এই বৃষ্টির কারণে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছে। লা গার্ডিয়া বিমানবন্দরের টার্মিনাল এ’তে পুরোপুরি পানি উঠে যাওয়ার আগেই সেটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সব যাত্রীকে পরামর্শ দেয়া হয় যেন তারা ভ্রমণ করার আগে তাদের এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করে নেয়।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে যে উদ্ধারকাজে সহায়তা করতে ন্যাশনাল গার্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ মাসে নিউ ইয়র্ক শহরে আনুমানিক ১৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৮৮২ সালের পর থেকে এই প্রথমবার সেপ্টেম্বর মাসে এই পরিমাণ বৃষ্টি হল বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অধিদপ্তর, ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস।