মুরাদনগরে শত বছরের পুরনো স্কুলের ক্লাস চলে খোলা আকাশের নিচে

প্রকাশকালঃ ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০৭ অপরাহ্ণ ০ বার পঠিত
মুরাদনগরে শত বছরের পুরনো স্কুলের ক্লাস চলে খোলা আকাশের নিচে

ঢকা প্রেস
আবুল কালাম আজাদ ভূঁইয়া,কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

 

মুরাদনগর উপজেলায় প্রায় শত বছরের পুরনো পুস্করিনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন জীর্ণদশায় রয়েছে। শীত, গরম ও বৃষ্টি মাথায় পেতে নিয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগতে থাকা স্কুলটিতে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। এতে চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। পড়ালেখার সাফল্যে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও কাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-অভিভাবকরা।
 


বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুরাদনগরে পুস্করিনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করা হয় বিদ্যালয়টি। প্রর্যায়ক্রমে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে সরকার ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ভবনটির একটি কক্ষে অফিস ও অপর কক্ষটিতে শিশু শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হত। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে গেলে শিক্ষাকার্যক্রম প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ২০২২ সালে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দেন। এরপরও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট থাকায় খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে আড়াই শ শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। অপরদিকে দীর্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। সাতটি পদের বিপরীতে রয়েছেন পাঁচজন শিক্ষক। নেই কোনো নৈশপ্রহরী। এ অবস্থায় দ্রুত স্কুলটির জন্য নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির সুমা ও পঞ্চম শ্রেণির তারেকসহ অনেক শিক্ষার্থী। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়ে প্রখর রোদে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানায় তারা। তারা আরও জানায়, বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে অনেকদিন ক্লাস করতে পারেনি।
 


প্রায় শত বছরের পুরনো বিদ্যালয়টির দুর্দশার ব্যাপারে স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. সেলিম সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি সভাপতি থাকা অবস্থায় একটি পুরাতন ভবন ছিলো। ভবনটি জরাজীর্ণ থাকায় ২০২২ সালে ওই ভবনটি নিলামের মাধ্যেমে ভেঙে ফেলা হয়। এতে করে স্কুলটি চরম শ্রেণিকক্ষ সংকটে বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়। পরে আমি স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি টিনের ঘর নির্মাণ করি। এতেও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট শেষ না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে বাধ্য হই।
 



পুস্করিনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তামান্না আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এরপরও কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
 

এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নতুন ভবনের ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগির নতুন ভবনের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। তাতে দ্রুত ভবন সংকটের সমস্যা সমাধান হবে। প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে ও সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদওগুলো খুব শিগগির পূরণ করা হবে।
 

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চাপিতলা ইউনিয়নের ৫৭নং পুস্করিনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রতিবছর কোন কোন উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নেই উপজেলা শিক্ষা-অফিসার তা আমাদেরকে অবহিত করেন। সরকার থেকে আমরা বরাদ্দ পেলে উপজেলার শিক্ষা-অফিসারকে দিয়ে থাকি। আপনার মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি আমি জেনেছি। আমি মুরাদনগর উপজেলার শিক্ষা-অফিসারের সঙ্গে আজই (সোমবার) কথা বলব।