‘এক দফা, এক দাবি’ বিএনপি‘সরকারের পদত্যাগ’

প্রকাশকালঃ ১৩ জুলাই ২০২৩ ০৬:১৮ অপরাহ্ণ ২১৪ বার পঠিত
‘এক দফা, এক দাবি’ বিএনপি‘সরকারের পদত্যাগ’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ চেয়ে ‘এক দফা, এক দাবি’ ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন। এদিন বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, এলডিপি, গণফোরাম, গণ অধিকার পরিষদসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোট যুগপৎভাবে এক দফা ঘোষণা করে।

‘এক দফা, এক দাবি’ কী? এ প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকারের পদত্যাগ; এটাই এক দফা, এক দাবি।

এরপর মির্জা ফখরুল এক দফা দাবিতে ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনের ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ১৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। একই কর্মসূচি থাকবে জেলা ও মহানগরেও। ১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। 


এটাকে যুগপৎ ধারার প্রাথমিক কর্মসূচি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরপরও যদি আঙুলে ঘি না ওঠে, তাহলে কী করে ওঠাতে হয়, এ দেশের মানুষ তা জানে। প্রয়োজনে প্রত্যাশিত কর্মসূচি নিয়ে এই কর্তৃত্ববাদী, লুটেরা সরকারকে সরিয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। যদি কোথাও ফয়সালা না হয়, ফয়সালা হবে রাজপথে।’

দুই দিন আগের ঘোষণায় বিএনপি গতকাল ঢাকায় বড় আকারের এই সমাবেশ করল। এই সমাবেশ থেকে ‘এক দফার’ ঘোষণা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিল। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দুজন কর্মকর্তার ঢাকায় অবস্থানকালে অনেকটা নির্বিঘ্নেই বিএনপি এই সমাবেশ করল। দীর্ঘদিন পর অনায়াসে বিএনপি এ সমাবেশের অনুমতি পায়। সমাবেশের জন্য ঢাকায় মাইকে প্রচারেরও সুযোগ পায় দলটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও আগের মতো ভূমিকায় দেখা যায়নি। সমাবেশ চলাকালে পুলিশকে বিভিন্ন মোড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।

বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরু হলেও কার্যত সকাল থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। কয়েক দফা বৃষ্টিতে ভিজেও তাঁরা রাস্তায় অবস্থান নেন। দুপুরের আগেই নয়াপল্টনের রাস্তার দুই পাশ ভরে যায়। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের একটি অংশ পশ্চিমে কাকরাইল মোড়, পূর্বে ফকিরাপুল পার হয়ে আরামবাগ, আরেক অংশ দৈনিক বাংলা এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অনেক নেতা-কর্মীকে পুরানা পল্টন এলাকার অলিগলিতেও অবস্থান নিতে দেখা যায়।


বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় অর্ধশত নেতা বক্তব্য দেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমরা একটা যৌথ ঘোষণা দেব যার যার জায়গা থেকে। প্রায় ৩৬টি রাজনৈতিক দল, জোট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সর্বসম্মতভাবে। সেই সিদ্ধান্তটি হচ্ছে...যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের এক দফার ঘোষণা। এক দফা, আর কোনো দফা নাই।’ উল্লেখ্য, এর বাইরে এবি পার্টি সংবাদ সম্মেলন করে এক দফা দাবির প্রতি সংহতি জানায়।


এক দফার ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই এক দফা হচ্ছে বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, মিথ্যা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল, রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি।

কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অন্যায়-অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলছেন, লড়াই করছেন, তাঁদেরও আমরা আহ্বান করছি, আসুন আমরা একসাথে সমবেত হয়ে একটা দুর্ভেদ্য উত্তাল আন্দোলন গড়ে তুলি। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই লুটেরা, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার, জনগণের একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারি।’


ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, পদত্যাগের এখনো সময় আছে। অন্যথায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পরিষ্কার করে বলে দেয়, তখন কিন্তু পালানোর পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি জানান, যুগপৎ কর্মসূচির পাশাপাশি তারুণ্যের সমাবেশ, কৃষক দল ও শ্রমিক দলের সমাবেশ, পেশাজীবীদের সমাবেশ চলবে।

আওয়ামী লীগের সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সারা দেশে ঘরে ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করে শান্তি সমাবেশ করে। আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে লগি-বইঠার দিন শেষ হয়ে গেছে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। যারা নির্বাচনে যাবে, ভোট চোরদের সমর্থন করবে, তাদের রেহাই দেওয়ার সুযোগ নেই।


আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশিরা তো ভারতে, নেপালে, ভুটানে, শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছে না। বাংলাদেশে কেন আসছে, সেটা সবার কাছে পরিষ্কার। তিনি বলেন,‘ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। জনগণ জেগেছে, আপনাদের যেতে হবে।’

এ ছাড়া সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও বরকতউল্লা, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির ও হাবীব উন নবী খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন, সংসদ বিলুপ্তসহ ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা ঘোষণা করে। এরপর সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। এর ছয় মাস পর গতকাল একযোগে ১২টি স্থান থেকে বিএনপিসহ ৩৭টি দল পৃথকভাবে সরকার হটানোর এক দফার ঘোষণা দিল।