মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অর্থনৈতিক পতনের ফলে সেখানে মানবিক সংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে, যদি দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে শুধুমাত্র রোহিঙ্গারা নয়, বরং অন্যান্য জনগোষ্ঠীও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে জাতিসংঘ। তবে বাংলাদেশ এ আহ্বানকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সংস্থাটির প্রস্তাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ১২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে রাখাইনের অর্থনৈতিক সংকট তুলে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহ বন্ধ, আয়ের উৎস সংকুচিত হওয়া, মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন এবং খাদ্য উৎপাদনে ধস নামার মতো চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, আগামী মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে রাখাইনের যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সংকট মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। সংস্থাটি কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে একটি চালান পাঠাতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয় চালান পাঠাতে ব্যর্থ হয়, কারণ বাংলাদেশ সরকার সেটি অনুমোদন দেয়নি। জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশকে সীমান্ত ব্যবহার করে সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি অস্বীকার করা যায় না, তবে এ ধরনের সংকটে সবসময় শুধু বাংলাদেশকেই এগিয়ে আসতে বলা হয়। অথচ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারতকে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত করা হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত চাপে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে ত্রাণ পাঠানো হলে রাখাইনের জনগোষ্ঠী ত্রাণের আশায় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। তাছাড়া, রাখাইনে বর্তমানে সরকারি বাহিনী অনুপস্থিত থাকায় সাহায্য বিতরণের নিশ্চয়তা নেই এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আগামী বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরে আসছেন। তিনি বিভিন্ন বৈঠক এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। সফরে রোহিঙ্গা সংকট এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া, জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয়ে কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস জানান, মহাসচিব মূলত রমজান মাসে সংহতি প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সফর করছেন। তবে এ সফরে বাংলাদেশের নির্বাচনী ও সাংগঠনিক সংস্কার নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনাও রয়েছে।
জাতিসংঘের আহ্বান সত্ত্বেও বাংলাদেশ পরিস্থিতির জটিলতা ও সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতার প্রয়োজন থাকলেও, এটি হতে হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে।