ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির স্বাস্থ্যসেবা দীর্ঘদিন থেকে নুয়ে পড়েছে। রোগে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে হাসপাতালের কার্যক্রম। বছরের পর বছর থেকে চিকিৎসক ও নার্সসহ জনবল সংকটের কারণে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে এর পথচলা। দীর্ঘ সময় ধরে এমএলএসএস (পিয়ন) দায়িত্ব পালন করছেন স্টোর কিপারের। ফলে রোগীর ঔষধসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে বলেও রয়েছে নানা অভিযোগ। এ কারণে চিকিৎসা সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্বাস্থ্যসেবার সাথে খাবারের মানও নিম্ন এবং হাসপাতালের ভিতর ও বাহিরের রয়েছে ময়লা আর্বজনা।
জানা গেছে, হাসপাতালটি ২০০৮ সালের ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শয্যায় হওয়ার জন্য নির্মাণ ভবনটিও তৈরি সময় নেয়া হয় অনিয়মের আশ্রয়। ৫০ শয্যা হলেও সেই ক্যাটাগরি অনুযায়ী এখানে চিকিৎসকসহ অন্যান্য সুবিধা নেই। বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। কোন নিয়ম না থাকায় চিকিৎসকরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ডিউটি করে আসলেও বেশির ভাগ সময় ভর্তি রোগীরা দেখা পান না ডাক্তারের। শুধু তাই নয় দায়িত্বরত নার্সের সব সময় দুর্ব্যবহারে রোগীরা হয়ে পড়েন অসহায়।
এছাড়াও চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন অজুহাতে বদলি হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক সংকটময় পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। যেখানে ২১ জন ডাক্তারসহ ১৪২টি পদ রয়েছে সেখানে মাত্র ৬ জন ডাক্তারসহ কর্মরত রয়েছেন ৮৭জন। এর মধ্যে অনেকে বিভিন্ন অযুহাতে প্রায় সময় থাকেন অনুপস্থিত। এরপর অনেকে সুবিধার জন্য থাকেন ডেপুটেশনে।
র্দীঘদিন থেকে একটি গুরত্বপূর্ন পদ স্টোর কিপার না থাকায় সেই স্থানে দায়িত্ব পালন করে আসছেন একজন এমএলএসএস (পিয়ন) নাছির উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, দায়িত্বে একজন পিয়ন থাকায় কতিপয় অসাধু স্টাফরা রোগীদের বরাদ্দের ঔষধসহ বিচানার চাদর, প্লাটিকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কৌশলে সরিয়ে ফেলেন। এ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভার না থাকায় সরকারী এ্যাম্বুলেন্সটিও সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারছেনা স্থানীয় রোগীরা। ফলে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বহিরাগত এ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ি নিতে হচ্ছে। নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছতা না করায় হাসপাতালের ভিতর ও বাহিরে ময়লা আর্বজনার স্তুপ হয়ে পড়ে এবং দুগন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে রোগী ও স্বজনরা। ফলে অনেকে সুস্থ হওয়ার আগেই ছাড়ে হাসপাতাল। খাবারের মান নিম্ন হওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে খেলেও অনেকে ফেলে দেন।
রোগীরা বলেন, একে তো ডাক্তার পাওয়া যায় না সময় মতো, এর উপর দায়িত্বরত নার্সদের দুর্ব্যবহার সবকিছু হার মানায়। তারা আরও বলেন, হাসপাতালের ভিতরে ও বাহিরে ময়লা জমে থাকায় দুগন্ধে থাকা যেমন কষ্ট কর তেমনি খাবার নিম্ন মানের হওয়ায় সেগুলো খাইতে বড় কষ্ট হয়।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী যায় যায়, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ৭, মেডিকেল অফিসার ৪, সহকারী সার্জন ৫ জন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ১জন, ৬টি ইউনিয়নে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ৬জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৪জন, পরিসংখ্যানবিদ ১জন, স্টোরকিপার ১জন, যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারী ১জন, জুনিয়র মেকানিক ১জন, টিকিট ক্লার্ক(আউট সোর্সিং)সহ ২জন, আয়া ২, নিরাপত্তা প্রহরী ১, কুক ২, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৩, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১, স্বাস্থ্য সহকারী ১, স্বাস্থ্য সহকারী সিনি স্টাফ নার্স ৫, ড্রাইভার ১জনের পদ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা পড়ে আছে।
হাসপাতালে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০ জন এবং আন্তবিভাগীয় প্রায় ৪০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সের বেশির ভাগ পদ শূন্য থাকায় বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে উপস্থিত চিকিৎসক ও নার্সদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। মানসম্মত অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও লোকবলের অভাবে সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই এর অপারেটর।
চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকসহ সকল সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি সকল সমস্যা সমাধানের জন্য।