রিজার্ভের পরিমাণ যে কারণে কমেছে

প্রকাশকালঃ ১০ মে ২০২৩ ০১:৩৫ অপরাহ্ণ ১৪৪ বার পঠিত
রিজার্ভের পরিমাণ যে কারণে কমেছে

দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার জন্য কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম আটকে রাখা ও বিনিময় হারের ওপর কড়াকড়ি আরোপের দায় রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বহন কঠিন হয়েছে। এ ছাড়া বাইরের ঋণ পরিশোধেও সমস্যা হয়েছে। গতকাল ঢাকায় এক সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক আপডেটে এসব কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলারের দাম কৃত্রিমভাবে আটকে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিনিময় হারের ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করা ছিল।

এসব কারণে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ডলারের দামে এক পর্যায়ে বড় পার্থক্য তৈরি হয়। এতে আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা কমে যায়। যার ফল হিসেবে দেশের রিজার্ভের পরিমাণও কমে গেছে।


শুধু বাংলাদেশ নয়, এ অঞ্চলের আরও কিছু দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ ও আনুষ্ঠানিক প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ নিয়ে বলা হয়েছে, উচ্চ আমদানি ব্যয়, ঋণ আদায়ে শৃঙ্খলা না থাকা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির দুর্বলতার কারণে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো গত তিন বছরে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। এ অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার হয়ে প্রবৃদ্ধিতে যেতে হলে বৈষম্য দূর করে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ১১তম দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক পলিসি নেটওয়ার্ক সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সুযোগের অভাবে অনেক মানুষই তাদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেন না।


জন্মস্থান, পারিবারিক পটভূমি, বর্ণ, জাতিসত্তা ও লিঙ্গ— ইত্যাদি কারণে এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন অনেক সম্ভাবনাময় মানুষ। এতে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্টের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে যোগ্যদের সমান সুযোগ দিতে হবে।

বিশ্বব্যাংক, সাউথ এশিয়া ইকোনমিক পলিসি নেটওয়ার্ক ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইজিডি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক। প্রথম দিনের বিভিন্ন কর্ম–অধিবেশনে ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।


সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গত দুই দশকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও সুযোগের বৈষম্য এখনো প্রকট। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সুযোগের বৈষম্য রয়েছে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সামাজিক জীবনমান উন্নয়নে এখনো পিছিয়ে আছে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়ে বৈষম্য দূর হবে না। এ জন্য আর্থসামাজিক সব ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, সুযোগের অভাবে অনেক মানুষই তাদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেন না।তাই সুযোগের এ বৈষম্য শুধু অন্যায্যই নয়, এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও কমিয়ে দেয়।