মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের সমর্থকদের ওপর সংঘটিত হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলেছে, ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে হামলাকারী এবং উসকানিদাতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
রোববার এনসিপির ধর্ম ও সম্প্রীতি সেল থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সেলের সম্পাদক তারেক রেজা বলেন,
“মানিকগঞ্জে আবুল সরকারকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তার সমর্থকদের ওপর হামলা, ধাওয়া ও ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাকে আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি। যে মতবিরোধ বা অভিযোগই থাকুক না কেন—সহিংসতা, হয়রানি ও আইন অমান্য করার কোনো বৈধতা নেই।”
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে বাউল, ফকির, সুফি, তাসাওফপন্থীসহ বিভিন্ন ধারার ঐতিহাসিক ও সমৃদ্ধ অবদান রয়েছে। এই বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা মানে মানবিক রাষ্ট্রচিন্তা ও সম্প্রীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। রাষ্ট্র সবার—এখানে ভিন্নমত দমন নয়, বরং শুনে বোঝার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
এতে আরও বলা হয়, ধর্মীয় মত বা ব্যাখ্যায় ভিন্নতা থাকতেই পারে এবং তা মাঝে মাঝে বিতর্ক সৃষ্টি করতেও পারে। তবে এসবের সমাধান কখনোই সহিংসতা বা প্রতিশোধের মাধ্যমে হতে পারে না। দেশের দায়িত্বশীল আলেমসমাজ যুগের পর যুগ শান্তিপূর্ণ দাওয়াত, ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও সদাচরণের মাধ্যমে দ্বীনের শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছেন—এটিই আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। সমাজে উত্তেজনা তৈরি হলে এই শান্তিপ্রিয় আলেমদেরই মানুষকে সংযম, শান্তি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাখতে ভূমিকা রাখা উচিত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ধর্ম ও সমাজের বিষয়ে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। শান্তিপূর্ণ দাওয়াত ও জ্ঞানভিত্তিক সংলাপই দ্বীনের প্রকৃত দিশা—এ সত্য আজ আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
এনসিপি দাবি করে, মানিকগঞ্জের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। মতভিন্নতা বা অভিযোগের সমাধান ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে হতে হবে—কখনোই জনতা বা গোষ্ঠীর হাতে নয়। একই সঙ্গে বাউল–ফকির–তাসাওফপন্থীসহ সব সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বকে উসকানি, বিভাজন ও সহিংসতা পরিহার করে সম্প্রীতি, সংযম ও পারস্পরিক সম্মানের সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়।
রোববার সকাল ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাউল শিল্পী আবুল সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত চারজন আহত হন। আহতদের মধ্যে তিনজন আবুল সরকারের ভক্ত—
আবদুল আলীম (২৫), শিবালয়ের শাকরাইল গ্রাম
আরিফুল ইসলাম (২৯), সিঙ্গাইরের তালেবপুর গ্রাম
জহিরুল ইসলাম (৩২), হরিরামপুরের কামারঘোনা গ্রাম
আহত অপর ব্যক্তি হলেন সদর উপজেলার বরঙ্গাখোলা গ্রামের আবদুল আলীম (২৭)।
‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারধারী একটি পক্ষ এবং আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরেই এ সংঘর্ষ হয়।
সমাপনী বার্তা:
এনসিপি বলেছে, বিভাজন নয়—সম্প্রীতিই হোক বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সভ্যতার পথচলার ভিত্তি।