ঢাকা প্রেস নিউজ
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, "আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। পরে যেন কেউ না বলেন যে, আমি সতর্ক করিনি। যদি আমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করি, কাদা ছোড়াছুড়ি, হানাহানি ও সংঘাত চলতে থাকে, তাহলে আমাদের দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।"
মঙ্গলবার রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলে আয়োজিত ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড স্মরণে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে তিনি সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধ প্রবণতা.....
সেনাপ্রধান আরও বলেন, "আমরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে ব্যস্ত, একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছি। এটি অপরাধীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করছে। যখন রাষ্ট্রের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়, তখন অপরাধীরা তাদের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালানোর সুযোগ পায়। কিন্তু যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে সম্মিলিতভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।"
পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই বাহিনীগুলো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও কিছু বিচ্ছিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। দেশ দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে, কারণ এই সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করেছে।"
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা......
তিনি বলেন, "পুলিশ বাহিনী কার্যকর হতে পারছে না, কারণ অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, কেউ কেউ জেলে আছেন। র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা নানা অভিযোগের মুখে পড়েছেন। এসব বিষয়ে তদন্ত চলবে, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তবে তা এমনভাবে করতে হবে যাতে সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট না হয়। যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।"
নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা.....
সেনাপ্রধান বলেন, "দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করছে। আমি ড. ইউনূসের সাথে আলোচনা করেছি এবং তিনি আমার সাথে একমত হয়েছেন যে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া উচিত। সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে, আর আমাদেরও উচিত একসঙ্গে কাজ করা।"
জাতির প্রতি আহ্বান.......
সেনাপ্রধান দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আসুন, আমরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না করে, দেশ ও জাতির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হই। মতের অমিল থাকতে পারে, চিন্তা-চেতনায় পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু দিন শেষে আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশকে এগিয়ে নেওয়া। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে দেশ আরও উন্নত হবে এবং সঠিক পথে পরিচালিত হবে। অন্যথায়, আমরা আরও জটিল সমস্যার সম্মুখীন হব।"
সেনাবাহিনীর প্রতি বিদ্বেষ বন্ধের আহ্বান......
তিনি বলেন, "কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর প্রতি অকারণে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, যা আমাদের জন্য দুঃখজনক। সেনাবাহিনী সবসময় দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও আমাদের পাশে আছে। আমাদের আক্রমণ করবেন না, বরং আমাদের উপদেশ দিন, আমরা সেগুলো গ্রহণ করব। আমরা চাই, দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য সবাই একসাথে কাজ করুক।"