কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মূল হোতা রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমন। এ ঘটনায় ধর্ষণের মূল অভিযুক্তসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (২৯ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান।
ভুক্তভোগী ২৫ বছর বয়সী নারী শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন। তিনি বর্তমানে তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন আগে তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
ভুক্তভোগীর মা কিছুদিন আগে স্থানীয় ফজর আলীর কাছে টাকা ধার চান। নিজের ফোনে টাকা না থাকায় মেয়ের মোবাইল থেকে ফজর আলীকে ফোন দেন। সেই সূত্রে ফজর আলী ওই নারীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করে একাধিকবার যোগাযোগ করেন এবং কথার সূত্র ধরে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পূজার জন্য পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বাইরে গেলে ফজর আলী সুযোগ নিয়ে ওই নারীর বাড়িতে যান। রাত ১০টার দিকে তিনি দরজা খোলার অনুরোধ করলে নারী তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে জোর করে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।
এ সময় পাশের এক প্রতিবেশী ঘটনাটি দেখে ফেললে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এলাকাবাসী এসে ফজর আলীকে হাতেনাতে ধরে গণপিটুনি দেয়। ঠিক তখনই ছাত্রলীগ নেতা সুমন তার সহযোগীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর এবং ভিডিও ধারণ করেন।
পরদিন শনিবার রাতে সেই ভিডিও ফেসবুকে বিভিন্ন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ পেইজে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
পুলিশ অভিযানে নেমে রোববার ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ধর্ষণের মূল আসামি ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে ভিডিও ধারণ ও ছড়ানোর অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:
মোহাম্মদ আলী সুমন – রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি
রমজান আলী – জাফর আলীর ছেলে
মো. অনিক – তালেব হোসেনের ছেলে
মো. আরিফ – বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা
তাদের সবার বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর গ্রামে।
সুমন ছাত্রলীগের স্থানীয় ইউনিটের সভাপতি এবং অন্য তিনজন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। ধর্ষণের প্রধান আসামি ফজর আলীর একটি পুরোনো ছবিতে দেখা গেছে, তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন। যদিও স্থানীয় বিএনপি বলছে, সম্প্রতি তিনি কিছুদিন বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি দলের কেউ নন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, “ফজর আলীর সঙ্গে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। আমার ফোন নম্বর পেয়ে সে একাধিকবার কল করেছে। এমন ঘটনা আমার পরিবার ও স্বামীকে চরমভাবে কষ্ট দিয়েছে। ভবিষ্যতে বড় বিপদের আশঙ্কায় আমরা আর এগোতে চাই না।”
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, “মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”