ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে জুতার কারখানা করে সফলতা মুখ দেখেছেন উদ্যোক্তা সোলাইমান হোসেন ও রেগুনা বেগম রিনা নামের এক দম্পতি। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এলাকার শতাধিক নারী ও পুরুষের। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের জুতা এখন উপজেলা, জেলার গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার নামিদামি জুতার শো-রুমে। অন্যের কারখানায় উদ্যোক্তা হিসবে চাকুরী করা সোলায়মান এখন কারখানার মালিক। স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এক বছর আগে করা এ কারখানায় তৈরি হচ্ছে বাহারি মডেলের জুতা।
সোলাইমান হোসেন ঢাকায় লেদার এক্স নামের এক ফ্যাক্টরিতে ২৪ বছর উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক পর্যায় স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে পরিকল্পনা করেন জুতার কারখানা গড়ে তোলার। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে নিজের জমানো অর্থ দিয়ে কিনেন জুতা তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতি। স্ত্রী রেগুনা বেগম বলেন, স্বামীর সাপর্ট পেয়ে আজ আমার এ অর্জন। স্বামী সোলাইমান যেহেতু জুতার লাইনে উদ্যোক্তা হিসাবে ২৪ বছর থেকে আছেন। সেই সুবাদে আস্তে আস্তে জুতার কারখানার কাজ শুরু করেন। শুরুতে বাঁধার মুখে পড়লেও পরবর্তীতে সাফল্যের মুখ দেখেন সোলাইমান হোসেন ও রিনা দাম্পতি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মন্ডলের হাট ও তাজহাট মুসুল্লিপাড়া এলাকার কামদেব গ্রামের সোলাইমান হোসেন ও রেগুনা বেগম রিনা নামের এক দাম্পতির বেষ্ট সুজ এন্ড হেন্ডি ক্রাফটস নামের জুতার কারখানায় জুতা তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সেরা যন্ত্রাংশ ও সুনিপুণ দক্ষ কারিগর দিয়ে বাহারি মডেলের কেটস, বেষ্ট সু, লোপার ও মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের জুতা তৈরি করছেন। এছাড়াও ছেলে-মেয়েদের মন কাড়ানো সব ধরনের জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ-মানিব্যাগ, ওয়ালেট ও উন্নতমানের চামড়াজাত পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। কারখানায় কর্মব্যস্ততা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি একটি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের জুতার কারখানা। সুনিপুণ দক্ষতায় ধারালো বাটল দিয়ে রাবারের সোল বসিয়ে সোলের নিচে করা হয় প্রিন্টের ছাপ বসানোর কাজ। আবার পাশেই মেশিনের সাহায্যে কেউ করেন সেলাইয়ের কাজ। এভাবে কারিগরদের নিরলস পরিশ্রম ও সুনিপুণ দক্ষতায় তৈরি হচ্ছে বাহারি মডেলের নান্দনিক সব জুতা আর সেন্ডেল। এদিকে জুতা তৈরির জন্য শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলতে কারখানায় রয়েছে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা। কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ করছেন সাচ্ছন্দের সাথে। এখানকার উপার্জিত আয় দিয়ে স্বচ্ছল ভাবে চলছে তাদের সংসার। চাহিদা অনুযায়ী তারা তৈরি করেন নানান মাপের দুই ফিতা থেকে শুরু করে বেল্ট জাতীয় সব ধরনের জুতা। জুতার মাপ ও মান অনুযায়ী ভিন্ন দামে বিক্রি হয় এসব জুতা। এছাড়া প্রতিদিন অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে নানান মাপের বাহারী ধরনের জুতা। তারা জানান, প্রতিদিন অনলাইনে প্রায় ১’শ জোড়া পর্যন্ত জুতা বিক্রি করা হয়।
কারখানায় কর্মরত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম (৩৪), জাহিদ হাসান (২৫), রুবিনা বেগম (২৩), আদরি আক্তার (২২), মাহফুজা বেগম (৩২) ও লুৎফর রহমান (২৭) সহ আরও অনেকে বলেন, প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে জুতার কারখানায় আমরা কাজ করে আয়ের মাধ্যমে সংসার পরিচালনা করে আসছি। এরকম কারখানা আমাদের এলাকায় গড়ে উঠবে ভাবতেই অবাক হয়ে যাই। তারা আরও বলেন, এ কারখানা না থাকলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে জুতার কারখানা গড়ে উঠায় আমরা অনেক আনন্দিত।
এলাকাবাসী সাইদুল ইসলাম (৪৬), আমিনুল ইসলাম (৩৫), জয়মালা (৩৮) ও গণি মাষ্টার (৫২) সহ আরও অনেকে বলেন, আমাদের এলাকায় জুতার কারখানা গড়ে উঠায় আমরা ভীষণ গর্বিত। এ কারখানায় আমাদের এলাকার অনেক লোক চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সরকারি সহযোগিতা দিয়ে কারখানার প্রসারতা বৃদ্ধির দাবী জানান তারা।
কারখানায় জুতা ক্রয় করতে আসা আইজুল ইসলাম (৩৯) বলেন, আমাদের এলাকায় গড়ে উঠা জুতার কারখানায় সু’জ ক্রয় করতে এসেছি। এখানে সঠিক মাপের বাহারি রঙের জুতা পাওয়া যায়। এখানকার জুতা অনেক মজবুত করে তৈরি করা হয়। তাই উপজেলা উলিপুর বাজার না গিয়ে সরাসরি কারখানায় এসেছি।
কারখানার ম্যানেজার এরশাদ হোসেন জানান, এখন জুতার কারখানার ব্যাপক প্রসারতা হয়েছে। এখন প্রতিদিন ৬০ জন শ্রমিক এখানে কাজ করেন। মাপ ও মান ভেদে দিনে প্রায় ২’শ জুতা তৈরি হচ্ছে। মাপ ও মান ভেদে প্রতি জোড়া জুতা বিক্রি হয় ১৪’শ থেকে ১৫’শ টাকা। দিনে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার জুতা তৈরি হয়। প্রতি মাসে সকল খরচ বাদেও লক্ষাধিক টাকা আয়ের আশা করেন ম্যানেজার এরশাদ হোসেন।
কারখানার মালিক সোলাইমান হোসেন বলেন, কারখানায় প্রথম ১০ জন শ্রমিক দিয়ে জুতা তৈরির শুরু করেন। আস্তে আস্তে এখন প্রায় ৬০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। এখন দিনে দিনে কারখানার প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি বে-সরকারি সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে কারখানার পরিধি বাড়ানোর প্রত্যাশা করেন এ দাম্পতি।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, উপজেলায় দম্পতি উদ্যোক্তায় জুতার কারখানা গড়ে উঠেছে আমি এখনো অবগত হইনি। আমাকে অবগত করলে সরকারি ভাবে সহযোগিতার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মো. জোনায়েদ জানান, কর্মমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়া উদ্যেক্তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে বিসিক শিল্প এলাকার প্লট দেয়ার পাশাপাশি সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা জানান তিনি।