ইসলাম একমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কথা বলে। মহান রব ও বান্দার মধ্যখানে অন্য কোনো মাধ্যমের স্বীকৃতি দেয় না। তাই তাঁর এমন কোনো রূপ দাঁড় করানো যাবে না, যাকে মানুষ সৃষ্টিকর্তা হিসেবে কল্পনা করতে পারে। তার কোনো আকার-আকৃতি, ছবি বা মূর্তির রূপ দেওয়া যাবে না। মূলত রব এমন সত্তা, যিনি সব দৃষ্টিশক্তি, কল্পনা, দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কোনো ধর্মযাজক বা পাদ্রির সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন হয় না। এদিকে ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমার বান্দারা আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে (তখন আপনি বলুন) আমি তো কাছেই, আমি প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। অতএব, তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে, যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮২)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর ইবাদত কোরো বিশুদ্ধভাবে। জেনে রাখো, একনিষ্ঠ আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা তো তাদের উপাসনা এ জন্যই করি যে তারা আমাদের আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ২-৩)
তাই ইসলামে নিষ্ঠাপূর্ণ কাজের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আছে। ইসলাম বিশ্বাস ও কাজের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে। পরিচ্ছন্ন জীবন, কর্মতৎপরতা ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে অন্য সত্তার মাধ্যস্থতা অস্বীকৃত। এমন চিন্তা ও বিশ্বাস সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কোনো কিছুই তার সদৃশ নয়, তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ১১)
মানবপ্রকৃতি দৃশ্যমান বস্তুর প্রতি অতি দুর্বল। মানুষ সব সময় এমন কিছুর সন্ধান করে বেড়ায়, যা সে নিজ চোখে দেখে। নিজের সব প্রেম ও ভালোবাসা তার জন্য উজাড় করে দিতে চায়। সম্মান ও শ্রদ্ধায় তার চরণ নুয়ে পড়ে। তাই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য এমন কিছু বস্তু নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা দেখলে তাঁর কথা স্মরণ হয়, যা অসংখ্য ঘটনার স্মৃতিবাহক। যেখানে নির্দিষ্ট দিবসে নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে তাঁর দ্বিন, আকিদা, তাওহিদ ও নবী-রাসুলদের কথা স্মরণ করা হয়। এগুলো হলো শায়িরুল্লাহ বা আল্লাহর নিদর্শনাবলি। এসব দেখলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রতি প্রেম ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এবং সম্মান ও মর্যাদাবোধ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এটিই হজের বিধান, কেউ আল্লাহর নির্ধারিত বিধানগুলো সম্মান করলে তার রবের কাছে তার জন্য এটি উত্তম।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩০)
তিনি আরো বলেন, ‘এটি আল্লাহর বিধান, কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করলে তা তো তার অন্তরের আল্লাহভীতির পরিচায়ক। এসব নিদর্শনে তোমাদের জন্য নানা ধরনের উপকার আছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, অতঃপর তাদের কোরবানির স্থান প্রাচীন ঘরের কাছে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২)