থানচি ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন?

প্রকাশকালঃ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:২৬ অপরাহ্ণ ১৬৬১ বার পঠিত
থানচি ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন?

বুজ শ্যামলে ঘেরা প্রাকৃতির লীলাক্ষেত্র আমাদের এ রূপসী বাংলাদেশ। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানেই এক বর্ণিল স্বপ্নের জগৎ। এই জগতে শুধু প্রবেশ করা যায়, বের হওয়া যায় না। বিশাল এই জগৎকে ঘিরে আছে অনেক সৌন্দর্য। আমরা তার মুগ্ধ দর্শক। এই সৌন্দর্য সাগরে আমরা আকণ্ঠ ডুবে আছি। পান করছি তার রূপসুধা। ভৌগলিক কারণে এখানকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য একেবারেই স্বতন্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, জলপ্রপাত, বনভূমি এদেশকে করে তুলেছে অর্পূব রূপময়। বিশেষ করে বান্দরবন। মনে হয় প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের সবটাই উজার করে দিয়েছে বান্দরবানকে। পাহাড়, ঝর্ণা, নদী আর মেঘের এক অদ্ভুত মিলনমেলা এই জায়গায়।

 

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা বান্দরবান। আয়তন: ৪৪৭৯.০৩ বর্গ কিমি। সীমানা: উত্তরে রাঙ্গামাটি জেলা, দক্ষিণে আরাকান (মায়ানমার), পূর্বে চিন প্রদেশ (মায়ানমার) এবং রাঙ্গামাটি জেলা, পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা।  জনসংখ্যা ২৯৮১২০। 

 

 

জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে থানচি উপজেলা সর্ববৃহৎ। আয়তন ১০২০.৮২ বর্গ কিমি। জনসংখ্যা ১৬৯৯২ জন। এ উপজেলায় মারমা, মুরং, ত্রিপুরা, খিয়াং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এ উপজেলায় ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বান্দরবন হতে ৭৯ কি. মি. দুরে অবস্থিত থানচি। থানচি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ট্যুরিষ্ট এরিয়া। থানচি তে রয়েছে নাফাকুম, আমিয়াকুমের মত অসাধারণ কিছু জলপ্রপাত। তাছাড়া রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু পাহাড় সাকাহাফং। থানচিতে লুকিয়ে আছে এমন হাজারো সৌন্দর্য। এজন্য একজন আদিবাসী বাঙ্গালী বলেছিলেন "যে থানচি দেখে নাই,সে যেন বাংলাদেশ দেখে নাই "। একবার থানচিতে ঘুরে আসুন, নিজেই এ কথাটির সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।

থানচি বাজার সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত। সাঙ্গু খরস্রোতা নদী। এই সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে। কারণ নদীটি রেমাক্রী হতে থানচির দিকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে এসেছে এবং এই জন্য এখানে অনেক স্রোত থাকে। স্রোতের বিপরীতে চলতে পথে কোথাও শান্ত সৃষ্ট সাঙ্গু দেখা যাবে আবার কোথাও দেখবেন বিকট ভয়ংকর খরস্রোত। সাঙ্গু নদীর কিছুদূর পর পর ১-২ ফুট এমনকি কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। 

 

 

থানচী থেকে ট্রলারে করে রেমাক্রী যাওয়ার ভ্রমণটাও অনেক উপভোগ্য। আশেপাশের সবুজ প্রকৃতি আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য ভুবনে। এই সৌন্দর্যের কোন তুলনা চলে না। নদীর দুপাশে সবুজে মোড়ানো উচু উচু পাহাড় রয়েছে। কোন কোন পাহাড় এতই উচু যে তার চূড়া ঢেকে থাকে মেঘের আস্তরে। সবুজে ঘেরা সে পাহাড়ে মাঝে মাঝে দু একটি আদিবাসীদের টিন আর বেড়ার বসতঘর দেখা যায়। 

সাঙ্গু নদীতে বিশাল বিশাল পাথর চিরে ঝরছে স্বচ্ছ পানি। দেখে মনে হতে পারে শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি। স্থানীয়রা এসব পাথরের নাম দিয়েছেন রাজা পাথর, রানী পাথর। এ বিশাল আকৃতির পাথরগুলো আদিবাসীদের কাছে দেবতার মতো। বড় পাথরের সাথে ছোট ছোট অনেক পাথর রয়েছে যেগুলো নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। সাঙ্গু নদীর পানির অপূর্ব প্রাকৃতিক পথ, বুনো পাখির কুজন, ঝিরির কুল কুল শব্দ এক ভিন্ন অনুভূতি সৃষ্টি করে।

 

 

পাহাড়ী নদী সাঙ্গু তার বয়ে চলার পথে অজস্র স্থানে ছোট ছোট জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। নাফাখুম, রেমাক্রিখুম, আমিয়াখুম জলপ্রপাত এর মধ্যে অন্যতম। ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে অন্যতম পছন্দের জায়গা হচ্ছে নাফাখুম। রেমাক্রি বাজার থেকে রেমাক্রি খালের পাশ দিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা  হাঁটার পর দেখা মিলবে বাংলার নায়াগ্রা নাফাখুম। অনবরত শীতল, নির্মল জলরাশি পড়ছে এই নাফাখুমে। বর্ষাকালে তীব্র গতিতে পানি নিচে পড়ার প্রচন্ড আঘাতে ঝরণার চারপাশে অনেকটা স্থান জুড়ে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার। 

ঝরনার চারপাশে পাহাড়-পর্বত, নদী, পাথরের স্তুপ, পানির ছল ছল শব্দ ও খালের পানির তীব্রস্রোত; সব মিলিয়ে এক অপরূপ সৃষ্টি। নাফাখুম জলপ্রপাতটি রেমাক্রি খাল হয়ে সাঙ্গু নদীতে মিলেছে। সেই মিলনস্থলে সৃষ্টি হয়েছে রেমাক্রী ফলস। নাফাখুমের শীতল ও স্বচ্ছ পানি চোখে মুখে লাগাতেই চলে যাবে পায়ে হাটার সেই দীর্ঘ পথ ভ্রমণের ক্লান্তি, কষ্ট। পানির বিন্দু দেহ মন সব আনন্দে ভিজিয়ে দেয়। 

 

 

যেভাবে যাবেন:


ঢাকা থেকে বান্দরবান গামী অনেক পরিবহন আছে যেমন হানিফ, শ্যামলী, ইউনিক, সৌদিয়া ইত্যাদি। যেকোন একটা উঠে পরবেন। বাসা ভাড়া ৬২০ টাকা থেকে শুরু। বান্দরবান শহরে নামার পর আপনি ২০০ টাকা জন প্রতি খরচে বাসে করে থানচি আসতে পারবেন। যদি আপনার বাজেট ভালো থাকে তাহলে চাঁদের গাড়ি রির্জাভ করে আসতে পারেন থানছি। এজন্য আপনাকে দিতে হবে ৫২০০-৬০০০ টাকা। থানছি নেমে,থানছি বাজার থেকে নিবন্ধিত গাইড নিয়ে বের হয়ে পড়ুন থানচির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।